৩ কোটির পোস্টিং, সরকারি চাকরি না সিন্ডিকেট ব্যবসা?

বিশেষ প্রতিবেদক: 


দুর্নীতির বলিষ্ঠ প্রতীক, টেন্ডার সিন্ডিকেটের মুখপাত্র এবং সরকারি টাকায় গড়ে ওঠা ক্ষমতার জাল বিস্তারকারী মোহাম্মদ ছামিউল হক আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘদিন ধরে ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিতর্কিত এই নির্বাহী প্রকৌশলী এবার মাত্র ৭ দিনের মাথায় ৩ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পুনরায় ময়মনসিংহে পোস্টিং আদায় করেছেন—যা এখন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর আস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। ক্ষমতার জাদুবলে বদলি, আবার পোস্টিং— কে এই ছামিউল হক? ২০২১ সালে শেরপুর বদলি হলেও অতিরিক্ত ঘুষ, তদবির ও প্রশাসনিক সিন্ডিকেটের সমর্থনে ছামিউল হক ফের ময়মনসিংহে পদে ফিরে আসেন। সর্বশেষ মাত্র ৭ দিনের মাথায় তার বদলির প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন পোস্টিং দিয়ে ফের তাকে ময়মনসিংহে দায়িত্ব দেওয়া হয়—যা সচেতন মহলের মতে, “প্রশাসনিক লজ্জার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত!”

এই কর্মকর্তা শুধু একজন প্রকৌশলী নন, বরং তিনি আওয়ামী ঘরানার একাধিক সিন্ডিকেট, সংগঠন ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে তুলেছেন একটি দুর্নীতির সাম্রাজ্য!

নতুন তথ্য: আরও গভীর দুর্নীতির শিকড়!
প্রশাসনের কুখ্যাত অতিরিক্ত সচিব শায়লা ফারজানা ও তার স্বামী অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের ছত্রচ্ছায়ায় গঠিত “বিসিএস পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন”-এর উপদেষ্টা হিসেবে ছামিউল হকের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত কার্যকর। রাজনৈতিক দলীয়করণের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত এটি! ছামিউল ও পপি দুজনেই জামালপুরের বাসিন্দা। ছাত্রলীগ নেত্রী পপির ভাই এবং তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের ঘনিষ্ঠজনদের ঠিকাদারি দিতে গিয়ে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব আদায়ের কৌশলে দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পের অর্থ পরিশোধের জন্য চেক নিজেই কব্জায় নিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করতেন। “চেক দিলেই টাকা চাই, না হলে আটকে রাখো”— ছিল নিয়মিত নীতি।

নিজেই ঠিকাদার! কোটি টাকার মালিক!
ডিপিএইচই-র অধীন ময়মনসিংহের প্রায় সব প্রকল্পে ছামিউল হক নিজেই ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে ভাগ বাটোয়ারা করতেন। শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী মহলকেও মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের চালক ছামিউল!
ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তিনি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারদের ফান্ড সরবরাহ ও দলীয় সিন্ডিকেটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তার ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে আওয়ামী সিন্ডিকেট—যা নিরপেক্ষ ঠিকাদারদের জন্য এক আতঙ্ক!

ঈশ্বরগঞ্জে ১০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ!
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন—যার যথার্থ তদন্ত হলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনরোষে ফুঁসছে ময়মনসিংহ: অবিলম্বে অপসারণের দাবি
ছামিউল হকের পুনঃ পোস্টিংয়ের ঘটনায় সচেতন মহল, ঠিকাদার সংগঠন ও নাগরিক সমাজ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, “সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, তবে আন্দোলনের মাধ্যমে তার অপসারণ নিশ্চিত করা হবে।”

সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ!
প্রশ্ন একটাই: এই ছামিউল হক কতটা শক্তিশালী যে তাকে কেউ ছুঁতে পারে না? এই প্রশ্ন শুধু একজন প্রকৌশলীর নয়, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার চরম দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি!

মন্তব্যের চেষ্টা, ফল শূন্য:
এতসব অভিযোগ ও আন্দোলনের মধ্যে প্রকৌশলী মোহাম্মদ ছামিউল হকের মন্তব্য জানার জন্য একাধিকবার ফোন ও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

সচেতনদের আহ্বান: এইবার থামাতে হবে দুর্নীতির এই দৈত্যকে!
এই প্রতিবেদন শুধু একটি দুর্নীতির আলামত নয়, বরং এ দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কীভাবে এক ব্যক্তি ক্ষমতার খেলা খেলে আইনের চেয়ে বড় হয়ে উঠে—তার বাস্তব প্রমাণ!

সরকারের কাছে প্রশ্ন— এখনো কি আপনি নীরব থাকবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *