ইমরান খানকে দেখতে পাকিস্তানে যাচ্ছেন দুই পুত্র কাসিম ও সুলেমান

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এ অবস্থায় তার দুই পুত্র কাসিম ও সুলেমান খান দীর্ঘ সময় পর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং শিগগিরই পাকিস্তানে গিয়ে তাকে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন না বলেও ইমরান খান নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার (২ আগস্ট) কারাগারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান খান বলেন, “আমি আমার ছেলেদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা কথা বলেছি। অনেকদিন পর কথা বলে খুব ভালো লাগলো। তারা পাকিস্তানে আসবে শুধুমাত্র আমাকে দেখতে, কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবে না।”

ইমরান খান আরও জানান, কারাগারে তার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং আবারও তাকে সংবাদপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।

ব্যক্তিগত পটভূমি: ব্রিটিশ মা, ব্রিটিশ বসবাস

ইমরান খানের দুই ছেলে—কাসিম ও সুলেমান—ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের সন্তান। জেমিমা একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখিকা, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। ১৯৯৫ সালে ইমরান ও জেমিমার বিয়ে হয় এবং ২০০৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। কাসিম ও সুলেমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে মায়ের সঙ্গেই বসবাস করছেন।

পিটিআইয়ের ১০৮ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

অন্যদিকে, ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চরম দমন-পীড়নের মুখে পড়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অভিযোগে দলটির ১০৮ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের আদালত।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির এক মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। এর জেরেই সেনাবাহিনী ও সরকারি স্থাপনায় হামলার অভিযোগে পিটিআই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১০৮ জনের মধ্যে ৫৮ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদ ও সিনেটের সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। বাকিদের এক থেকে তিন বছরের মধ্যে সাজা হয়েছে।

এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা হলেন:

  • ওমর আয়ুব খান – জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা

  • শিবলি ফারাজ – সিনেটের বিরোধীদলীয় নেতা

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সরকার পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

পিটিআইয়ের প্রতিক্রিয়া

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পিটিআই। দলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবার সংসদের উভয় কক্ষের বিরোধীদলীয় নেতাদের শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে শাস্তি দেওয়া হলো। এটা একটি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ঘটনা।”

দলটি আরও জানিয়েছে, তারা এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করবে এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের কারাবন্দিত্ব এবং তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আইনি অভিযান পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। একই সঙ্গে ইমরান খানের পরিবারের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও জনমনে কৌতূহল বাড়ছে, যা রাজনৈতিক আবহে নতুন মাত্রা যোগ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *