বিশেষ প্রতিনিধি:
ভূমিহীনদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা, ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন গঠন, হাট-ঘাটের ইজারাদারি প্রথা বাতিলসহ গরিবের পক্ষের সংবিধানের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব এলাকায় এক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি যৌথভাবে এ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ৭১-এর মতো, ৯০-এর মতো আবারও জনগণের রক্ত-ঘামে অর্জিত বিজয় এক-দুটি দল তাদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। আর আমাদের হাই-প্রোফাইল আহাম্মক সরকার সেটা বসে বসে দেখছে। কখনো কখনো তারাও এই দেশ ধ্বংসের যাত্রায় সকল প্রশ্রয়, আশ্রয়, রাষ্ট্রীয় পাইক–পেয়াদা–বরকন্দাজসহ সাপোর্ট দিচ্ছে। ফলাফল হচ্ছে—বিজয়টাই বেহাত হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
আবারও দেশে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসার উপক্রম হয়েছে। যারা জনগণের সঙ্গে আবারও প্রতারণার ফন্দি করছেন, তাদের উপর ইতিহাসের লানত পড়বে। হাসিনার মতো তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হবে।
তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে বিচার, টেকসই সংস্কার ও নির্বাচনকে সামনে রেখে দায়িত্বশীল রাজনীতি করার আহ্বান জানান। দেশের গরিবের পক্ষের এবং টেকসই উপায়ে সংবিধান সংস্কারের সিদ্ধান্ত না হলে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ‘জুলাই সনদ’-এ স্বাক্ষর করবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।
বিশেষ বক্তা বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দীন বলেন, গরিবের ট্যাক্সের টাকায় রাষ্ট্র–সরকার চলে, আর গরিব থাকে বঞ্চিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় গরিব, ভূমিহীন, কৃষক, জেলে, সাঁওতাল, সাধু-সন্ন্যাসী, দলিত, পাহাড়ি—সহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আনার দাবি জানান তিনি। সেটা না হলে গরিব, চাষাভুষা, মূর্খরা নিজেরা সংগঠিত হয়ে সংসদ দখল করে দাবিগুলো পূরণ করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
বিশেষ অতিথি ছামিউল আলম রাসু বলেন, এ দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন দেয় আমাদের সন্তান, ভাই, বোনেরা—আর সুবিধা নেয় রাজনৈতিক লুটেরা, চিটার, বাটপারেরা। এ সরকার নিজেদের জন্য কাজ করছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করছে না—তার বড় প্রমাণ, এখনো কৃষি ও ভূমি কমিশন বাস্তবায়ন না করা। উন্নয়নের নামে–বেনামে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন কৌশলে খাস জমি ভূমিহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে না দিয়ে করপোরেট কোম্পানি ও ভূমি দস্যুদের দিয়ে থাকে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। কৃষক আজ করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। এ দেশে এবার কৃষক বিদ্রোহ হলে এবার আর সামাল দিতে পারবেন না।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি জিয়ারুল ইসলাম সুমন বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ মানুষ ভূমিহীন। এখনো দেশের অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ কৃষি ও কৃষিসংক্রান্ত পেশায় যুক্ত। গণ-অভ্যুত্থানে দেশের প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে প্রান্তিক মানুষরা তাদের প্রাপ্য হিস্যা পাচ্ছেন না।