ঘিওরে একই রাস্তায় দুই প্রকল্প, প্রশ্নবিদ্ধ বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের সামাদের বাড়ি থেকে হযরতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজে দুই অর্থবছরে দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়ন ও একই রাস্তায় অর্থ উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) তত্ত্বাবধানে ওই রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্প সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমা বেগম।
ব্যয়: ২,০০,০০০.০১ টাকা
বাস্তবায়নকারী: প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (PIC)।

পরবর্তী অর্থবছর ২০২৪-২৫-এ আবারও একই রাস্তায় (কাবিটা প্রকল্পের আওতায়) ২,২৫,০০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার প্রকৃত কাজ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই শেষ হয়েছে, কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নতুন করে কোন কাজ হয়নি। তারা বলছেন—আগের বছরের কাজের কাগজপত্র দেখিয়ে আবারও বিল তোলা হয়েছে।

এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বলেন,

“আমি ওই রাস্তায় PIC প্রকল্পে কাজ করেছি, এখনো ৫০ হাজার টাকা পাওনা। আমি অটোরিকশা চালক। যদি আবার বিল তোলা হয়, তাহলে প্রকল্প সভাপতি যেন আমার পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেন।”

ইউপি সদস্য নাজমা বেগম জানান,

“২৩-২৪ অর্থবছরে কাজ করেছি, ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন, সব স্বাক্ষর হয়েছে, কিন্তু এখনো বিল পাইনি।”

অন্যদিকে ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন,

“আমি ২৪-২৫ অর্থবছরের কাবিটা প্রকল্পের বিল পেয়েছি।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মচারী ইলিয়াস বলেন,

“একই রাস্তায় দুই প্রকল্প হয়েছে। কাবিটা প্রকল্পের বিল আলমগীর মেম্বারকে দেওয়া হয়েছে।”

উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন,

“২৩-২৪ অর্থবছরে সামাদের বাড়ি থেকে আলমের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সেটি পরিদর্শন করা হয়েছে।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (PIO) মোঃ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা, বিশেষ করে পয়লা ইউনিয়নের মানুষ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানিয়েছেন—

“ঘিওরের ইউএনও ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি, একই রাস্তায় বারবার প্রকল্প দেখিয়ে যারা কাগজে বিল তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যাতে সরকারি অর্থ অপচয় বা আত্মসাত না হয়।”

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
একই রাস্তায় দুইটি প্রকল্পের বরাদ্দ ও বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে সরকারী অর্থের সম্ভাব্য অপচয় এবং প্রকৃত শ্রমিকদের বকেয়া সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একজন বলেন বিল পাইনি, অন্যজন বিল পেয়েছেন; এ অবস্থায় প্রশাসনিক নীরবতা ও দুর্নীতির আশঙ্কা বেড়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের দাবি স্থানীয়দের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *