বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম এখন বৈষম্য সৃষ্টির জায়গা: রাশেদ খান

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম, যেটি এক সময় গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, সেটিই এখন বৈষম্য সৃষ্টির প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি মনে করেন, এই প্ল্যাটফর্মের পবিত্রতা রক্ষায় এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে স্থগিত রাখা উচিত।

শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম নিয়ে উদ্বেগ

রাশেদ খান বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটা এখন বৈষম্য সৃষ্টির প্ল্যাটফর্ম। এটার পবিত্রতা রক্ষায় কার্যক্রম স্থায়ীভাবে স্থগিত রাখা দরকার।”

তিনি দাবি করেন, এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তা ঐতিহাসিক। তবে সেই অর্জন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে নানা অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতির মধ্য দিয়ে।

“গত এক বছরে সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধির পরিচয়ে চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, পদোন্নতি ও রদবদল বাণিজ্য হয়েছে। ফলে এই প্ল্যাটফর্ম এখন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের মতোই বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছেছে,”—পোস্টে মন্তব্য করেন তিনি।

ইতিহাসে জায়গা পাওয়ার বদলে বিতর্কে নিমজ্জিত

রাশেদ খান বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মের এমন অপমৃত্যু কেউ প্রত্যাশা করেনি। এটিকে সার্বজনীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষণ করা দরকার ছিল, যেন সবাই একে নিজের মনে করতে পারে।”

তার মতে, এখন যারা প্ল্যাটফর্মের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে আবার সকলকে একত্র করার চেষ্টা করছেন, তারা আসলে নিজেদের অতীত আচরণের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “গত এক বছরে যারা কোন মূল্যায়ন করেনি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, গণঅভ্যুত্থানের স্টেক থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছে—এখন তারা যদি বলে সবাই দরকার, তাহলে সেটি আত্মমর্যাদাহীনতা। প্ল্যাটফর্মকে রক্ষার প্রয়োজন এক বছর আগে তারা অনুভব করেনি, এখন কেন?”

বিতর্ক তৈরির পরিকল্পনার ইঙ্গিত

রাশেদ খান সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “প্ল্যাটফর্মটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কে টেনে রাখা হচ্ছে। কিছু মানুষ চায় এটি বিতর্কিত থাকুক, যাতে আওয়ামী লীগকে ঘিরে মানুষের ঘৃণা প্রশমিত হয় এবং জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আগ্রহ-প্রত্যাশা কমে আসে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই বিতর্কে যদি রাজনীতিক, ছাত্র সংগঠক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন, তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক ও আত্মঘাতী।”

ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনার ঝড়

রাশেদ খানের এ ধরনের স্পষ্ট ও কড়া ভাষার পোস্ট ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মতামত জানাচ্ছেন। কেউ কেউ একমত হয়েছেন, কেউ আবার প্ল্যাটফর্ম রক্ষায় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম” হয়ে ওঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের একাংশের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই এখন এর নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *