সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই: আমির খসরু

হাসান আলী: 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের জন্য একমাত্র পথ হলো সংসদের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই এবং এর জন্য জনগণের সম্মতি ও ম্যান্ডেট আদায় করা আবশ্যক।

শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর নীলক্ষেতের আইসিএমএবি মিলনায়তনে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মান্নানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আমির খসরু বলেন,

“সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো এখনো রাজনৈতিক ও দলীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয়। তবে যেকোনো পরিবর্তন আনার জন্য আমাদের অবশ্যই সংসদের মধ্যেই যাবো। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে, তারা আসলে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসী নয়। তিনি জানান,

“যারা নির্বাচনের পরিবেশকে অবরুদ্ধ করতে চায়, তারা সংসদীয় প্রক্রিয়া নিয়েও বিশ্বাস রাখে না। এদের পথ এবং পদ্ধতি স্পষ্ট নয়।”

বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন,

“আমরা যতই সংবিধান সংশোধন বা প্রশাসনিক সংস্কার করি না কেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে না পারি, তা কোনো লাভ হবে না। আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক সহনশীলতা ও অন্যের মতামতকে সম্মান করার মানসিকতা।”

দেশের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন,

“দেশের স্বার্থে এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মধ্যে ঐক্য এখনো অটুট রয়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, ৫ আগস্টের পর ঐক্য ভেঙে গেছে, আমি তা মনে করি না।”

আমির খসরু আরও বলেন,

“প্রত্যেক দলের নিজস্ব দর্শন ও চিন্তা-ভাবনা থাকবে। যেখানে আমরা একমত, সেখানেই একমত হবো। বাকিটা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ জনগণই এই দেশের প্রকৃত মালিক। তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।”

তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,

“দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে অন্যমতের প্রতি সহনশীলতা কমে গেছে। এতে করে গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড দুর্বল হচ্ছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”

সংসদের মধ্যেই সংবিধান সংশোধনের জন্য যে ধরণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, তার ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন,

“সংসদীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব সংশোধন হবে। এর বাইরে কোনো বিকল্প নেই। তাই সকল রাজনৈতিক দলকে সংসদের মধ্যেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে, যাতে সবাই মেনে চলতে পারে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও যোগ করেন,

“দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুশাসনের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহিষ্ণুতা ও মতভেদের সম্মান থেকে এগিয়ে আসতে পারলে দেশ নিশ্চিতভাবেই একটি উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”

স্মরণসভায় অন্যান্য বক্তব্য
এদিন স্মরণসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। তারা মরহুম আব্দুল মান্নানের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং তার রাজনীতিতে অবদানের কথা তুলে ধরেন।
স্মরণসভায় বিএনপির কর্মী ও নেতা-কর্মীরা ঐক্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *