র‍্যাব-৭ এর ‘অভিযান’ নাকি পরিকল্পিত লুটপাট ও হয়রানি, প্রবাসী ব্যবসায়ীর ঘর ভাঙচুর, অর্থ লুট, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, সাবেক প্রবাসী এবং বৈধ মাছ ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী সম্প্রতি র‍্যাব-৭ এর সিপিসি-৩ (চান্দগাঁও ক্যাম্প) এর একটি অভিযানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তার অভিযোগ— বিনা পরোয়ানায় বাসায় অভিযান চালিয়ে ঘর ভাঙচুর, ২০ লাখ টাকার বেশি অর্থ লুট, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং সাজানো মাদকের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাকে।

আইয়ুব আলী এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র‍্যাবের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন।

অভিযোগের বিবরণ:
ভুক্তভোগী আইয়ুব আলীর ভাষ্যমতে, ২০২৫ সালের ১২ জুন বিকেলে র‍্যাব-৭ এর একটি দল লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাওহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে তার বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের সময় ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের কোনো অনুমতি ছিল না। অভিযানের নামে তারা বাসায় থাকা প্রায় ৩৩ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ তালিকায় দেখিয়ে বাকি অর্থ লুট করে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলে। অভিযানের সময় স্ত্রীকেও নারী পুলিশ ছাড়াই পুরুষ র‍্যাব সদস্যদের মাধ্যমে হয়রানি করা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

সাজানো মামলা ও গ্রেপ্তার:
পরদিন ১৩ জুন র‍্যাব সদস্যরা নিজেদের আনা কিছু ইয়াবা তার বাসায় পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বাকলিয়া থানায় মামলা (নং-২৩) দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২২৩ পিস ইয়াবা এবং ১২ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আইয়ুব আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

পূর্ব মামলা ও প্রশাসনের বক্তব্য:
সিডিএমএস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে পূর্বে ঢাকার মতিঝিল, দক্ষিণখান, ভাটারা এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানায় একাধিক মাদক ও ফৌজদারি মামলা ছিল। র‍্যাবের দাবি, আইয়ুব আলী দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত এবং তার বিরুদ্ধে জব্দকৃত ইয়াবা ও নগদ টাকার মতো শক্ত প্রমাণ রয়েছে।

আইয়ুব আলীর পাল্টা দাবি:

আইয়ুব আলী বলেন, এসব মামলা তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও পারিবারিক শত্রুতার ফল। তার পারিবারিক জমি নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাবু এবং তার ভাই যুবলীগ নেতা মো. আবু তৈয়বের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, তারাই র‍্যাব সদস্যদের প্ররোচিত করে তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযান পরিচালনা করিয়েছেন

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরাপত্তাহীনতা:
আইয়ুব আলীর অভিযোগের পর স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো র‍্যাব সদস্যদের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি ও তার পরিবার বর্তমানে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এবং আরও মিথ্যা মামলা বা প্রাণনাশের আশঙ্কায় রয়েছেন।

তার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত

  • লুট হওয়া অর্থ ফেরত

  • সাজানো মামলা প্রত্যাহার

  • পরিবারকে সরকারি নিরাপত্তা প্রদান

  • মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার

প্রশাসনিক অগ্রগতি:
সূত্রে জানা গেছে, আইয়ুব আলীর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন।

প্রতিবেদকের দৃষ্টিতে:
একজন নাগরিক যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেই হয়রানি ও হয়রানির শিকার হন, তবে তা সমাজের জন্য অশনি সংকেত। অপরাধীকে গ্রেপ্তার যেমন প্রয়োজন, তেমনি নিরপরাধ কাউকে ফাঁসানো আরও ভয়াবহ। মাদকবিরোধী অভিযান সফল হোক, তবে তা যেন কখনও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়—এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আইয়ুব আলীর কথায়,
“আমি আজ একজন ক্ষতবিক্ষত নাগরিক। যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার আশায় বুক বেঁধেছিল, সেই রাষ্ট্রই আজ আমার জীবনে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বিচার চাই, নিরাপত্তা চাই। আমি চাই না, আর কোনো নিরপরাধ মানুষ এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাক।”

— একজন আহত, অথচ আশায় বুক বাঁধা নাগরিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *