শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে শিক্ষকতা পেশাকে অবজ্ঞা করে সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমপিওভুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
৩০ জুলাই বুধবার সকালে পৌর সদরের স্বপ্নকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগটি প্রকাশ পায়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বেথইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মী। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকরা। তবে ভিন্ন দৃষ্টিতে নজর কাড়ে দুইজন—দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি ফজলুল হক আলমগীর জোয়ার্দার ও দৈনিক যায়যায়দিনের প্রতিনিধি মাছুম পাঠান।
অভিযোগ রয়েছে, এই দুইজন মূলত এমপিওভুক্ত শিক্ষক। আলমগীর জোয়ার্দার লোহাজুড়ী এলাকার আ. হেকিম কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং মাছুম পাঠান শিক্ষকতা করছেন ভোগপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়।
ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার পেশাদার সাংবাদিকরা। তাদের প্রশ্ন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক সরকারি অনুমতি ব্যতীত অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারেন না। অথচ বাস্তবতা হলো, ওই শিক্ষকরা বছরের পর বছর সাংবাদিক পরিচয়ে সরকারি অফিসে প্রভাব বিস্তার করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা সরকারি বিজ্ঞাপন, সুযোগ-সুবিধা ও সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত অন্যান্য সুবিধাও গ্রহণ করছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজের অভিযোগ আরও গুরুতর—এই শিক্ষকরা সাংবাদিক সংগঠনে নিজেদের নেতা দাবি করে প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করছেন। সংবাদ সংগ্রহের নামে বিভিন্ন সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ এবং অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের ঘটনাও নজরে এসেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ শিক্ষক নেতা বলেন, “ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সাংবাদিকতা করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয় এবং শিক্ষক পেশার মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়।”
এ ঘটনায় অভিভাবকসহ সচেতন মহল চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেন, প্রশাসন যেন অবিলম্বে তদন্ত করে এই প্রভাবশালী শিক্ষক-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান—ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে জবাবদিহিতার আওতায় এনে শিক্ষা পেশাকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নয়তো শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব নিয়ে জনমনে গভীর সংশয় থেকে যাবে।