শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মাগুরজোড়া গ্রামের এক বিধবা নারীকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর প্রতারণার অভিযোগে থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে এক ‘স্বর্ণের পুতুল’ নাটক। স্বামীহারা মোছাঃ হারেছা খাতুন (৪২) স্বপ্নভঙ্গ ও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ার হৃদয়বিদারক এ ঘটনা এখন পুরো এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে।
হারেছার অভিযোগ, প্রতিবেশী ফয়জুল হক ও তাজমুল হকসহ আরও কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে তার কাছ থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানকে নিয়ে একাকী জীবনযাপন করছিলেন হারেছা খাতুন। এই একাকীত্ব ও সরলতার সুযোগ নেয় তারই প্রতিবেশী ফয়জুল ও তাজমুল। প্রথমে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে স্বর্ণের ব্যবসা, পরে সুপারি ও টক্কর ব্যবসার নামে একের পর এক মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়।
এরপর শুরু হয় আরও ভয়াবহ প্রতারণা। প্রতারকরা দাবি করে, হারেছার ঘরের নিচে ‘দুই-তিন কোটি টাকার স্বর্ণের পুতুল’ রয়েছে। এই পুতুল তোলার জন্য তারা আনেন এক কথিত কবিরাজ, যিনি নানা তন্ত্র-মন্ত্রের নাটক করে এক ‘সোনালী রঙের পুতুল’ তুলে নিয়ে যান।
পুতুল বিক্রি করে টাকা ফেরত দেওয়া হবে—এমন আশ্বাস দিয়ে আবারও কবিরাজের খরচ দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করে তারা। পরে আরেকটি ‘সোনালী রঙের বার’ দিয়ে নেয় আরও ৬ লাখ টাকা। সর্বশেষ, হারেছার জমির দলিল বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে আরও ৩ লাখ টাকা তুলে নেয় প্রতারক চক্রটি।
অবশেষে, স্থানীয় স্বর্ণকারের কাছে পরীক্ষা করে জানা যায়, কথিত ‘পুতুল’ ও ‘বার’ দুটোই সোনা নয়, বরং পিতলের তৈরি!
স্থানীয় বাসিন্দা জরিনা খাতুন, সাজেদা খাতুন, শামীম, জহুরা খাতুন ও লাল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এলাকাবাসীর সামনে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর গত ২৫ এপ্রিল রাতে অভিযুক্তরা হারেছার বাড়িতে এসে হুমকি দেয়—
“বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে শেষ করে ফেলব!”
এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হারেছা খাতুন। সন্তানদের নিয়ে তিনি এখন বাস্তুচ্যুত। তার অভিযোগ, জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে এবং এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাদের ওপর ভরসা করেছিলেন, তারাই আজ তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। অথচ, ঘটনার এতদিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এটি নিছক প্রতারণা নয়—এটি একটি অসহায় নারীর স্বপ্নভঙ্গ, একটি পরিবারের সর্বনাশ। প্রতারকদের এই ভয়ঙ্কর কৌশলের বিরুদ্ধে প্রশাসন যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে সমাজে এমন শত শত হারেছা খাতুন জন্ম নেবে।
এখনই সময়!
প্রশাসনের টনক না নড়লে বিচারহীনতার ভয়াল ছায়া আরও ঘনীভূত হবে।
দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে হারেছা খাতুনের ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দিন—এই দাবি এখন জনতার।