স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপথের মোড় এলাকায় অবস্থিত ‘হোটেল আল হায়াত’—অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত একটি কুখ্যাত আবাসিক হোটেল। এলাকায় প্রচণ্ড চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই হোটেলের মালিক সবুজ, ইমরান ও আকাশ, যাদের মধ্যে ইমরান সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অভিযোগ করেন।
অপরাধমূলক চক্রের কেন্দ্রবিন্দু
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, হোটেলটি পূর্ণকালীন মাদক সেবা ও দেহব্যবসার গুপ্ত আস্তানা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। নিয়মিতভাবে চলছে ইয়াবা ও গাঁজা বেচাকেনা, পতিতাবৃত্তি, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অবৈধ ব্যবসা। এমনকি কিশোর অপরাধীরা এখানে তাদের চাঁদাবাজি ও মাদকবাণিজ্যের লার্নিং সেন্টার হিসেবেও সক্রিয়।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ হোটেলের মালিকরা আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে সংযুক্ত থাকার সুবাদে প্রশাসনের একাংশের সহায়তা পেয়েছেন তারা। ফলে বারবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্তম্ভিত বিষ্মৃতি সৃষ্টি হয়েছে।
যেমন—‘রোজ গার্ডেন হোটেল’ বিষয়ে জাতীয় পত্রিকায় প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (যেমন ঢাকা ট্রিবিউনের ধারাবাহিক রিপোর্ট), তবুও প্রশাসন তা কার্যকরভাবে অনুসন্ধান করেনি । বর্তমানেও রোজ গার্ডেন হোটেলে দেদারসে চালাচ্ছে দেহ ব্যবসা ও মাদক সেবন।
অভিযান হলেও মূল ‘মাস্টারমাইন্ড’ অদৃশ্য
সম্প্রতি ওয়ারী জোনের এডিসি আকরাম ও যাত্রাবাড়ি থানার ওসি খালিদ হাসানের নেতৃত্বে অভিযান চালানোর পর কিছু খদ্দের ও যৌনকর্মী গ্রেপ্তার হলেও, মালিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
আইন-কানুনের বাস্তব চিত্র:
বর্তমানে সরকার অবৈধ হোটেল ও গোপন রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযানের আওতায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে—বিশেষ করে ট্যুরিজম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে নিবন্ধনহীন হোটেলের তালিকা চেয়েছে ও ব্যবস্থা শুরু করেছে।
এছাড়া, রাজধানীতে অবৈধ রেস্তোরাঁ ও হোটেল বন্ধে রাজউক, পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন-সহ বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে।
তবে সায়েদাবাদে অবস্থিত হোটেল আল হায়াতকেও দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স পরীক্ষা সাপেক্ষে বন্ধ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনও ভিজিবল পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
খোঁচা ও বাস্তব দাবি: “পুলিশ তো আমাদের নিয়ে সারাদিন ভাববে না… একদিকে ধরে নিয়ে যায়, আরেকদিকে আমরা আবার শুরু করি।” হোটেল মালিকদের এমন অভদ্র মন্তব্য প্রশাসনের উদাসীনতা স্পষ্ট করে।
হোটেল আল হায়াত শুধু এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি অবৈধ অর্থচক্র ও অপরাধ সিন্ডিকেটের কেন্দ্রবিন্দু। সরকারের নির্দেশ থাকলেও প্রশাসনের সাধারণভাবে নেয়া নীরবতা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এর অবাধ বিস্তারে সহায়ক।
মালিকরা দিন যত যাচ্ছে, ততই অধিক ভয়ে, সংহতির ঘোরে এবং দায়িত্বশীলতার অভাবে শহরের জনজীবনকে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন করছে। তারা যদি অবৈধ অটোরিকশা, ভ্যান, গ্যাং এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করে দমনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়—তবে আমূল সংস্কার ছাড়া সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।