রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও চকবাজার ফুলতলার আবাসিক বাসিন্দারা এখন জিম্মি

মোঃ সাইফুর রহমান সাইফুল: 

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চকবাজার এর আওতাধীন ফুলতলার মোড়, ঘাষিয়ার পাড়া, কে.বি. আমান আলী রোড একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। আর এই এলাকার বাসিন্দাদের টার্গেট করেই প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে মদ, জুয়া, চাঁদাবাজি সহ একাধিক অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কিশোর সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়ভাবে তথ্যানুসন্ধানে ভয়ঙ্কর এসব তথ্য ও ভিডিও চিত্র উঠে এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। যা সত্যি এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি কিশোর অপরাধী গ্রুপ। যারা নিয়ন্ত্রণ করছে এই সব অবৈধ আয়ের উৎসগুলো। এরা প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক চাঁদাবাজি, জুয়ার বোর্ড পরিচালনা, মাদক বিক্রয় সহ নানা রকম ভয়ঙ্কর অপরাধ। এদের সাথে জড়িত আছে কয়েকজন পুলিশের সোর্সও। যাদের ইনফরমেশনের মাধ্যমে এই সব কিশোর অপরাধীদের চাঁদাবাজি সহ সৃষ্টি হয় একাধিক অবৈধ আয়ের উৎস। এসব কিশোর গ্যাং এর আয়ের প্রধান টার্গেট হলো ফুটপাতে ভাসমান ভ্যানগাড়ি, অবৈধ অটোরিকশা, প্রকাশ্যে ও গোপনে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা, চোলাই মদ বিক্রয়, স্থানীয়ভাবে ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান স্থানান্তর এবং বেচাকেনা।

চকবাজার ফুলতলার মোড় হতে কে.বি. আমান আলী রোড জুড়ে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্যাংক সহ সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন এর ট্যাক্স দেওয়া সাধারণ মানুষের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সহ বাড়িঘর। যা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত বন্দি ও জিম্মি দশায় আক্রান্ত। ফুলতলার মোড় এবং ঘাষিয়ার পাড়ার প্রবেশ মুখ চকবাজার এবং বাকলিয়া থানার অন্তর্বর্তী স্থান। ৬ নম্বর ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ মনে করেন এসব দৃশ্য প্রতিদিনের যা প্রশাসন প্রতিদিন দেখেও না দেখার মতো অবহেলিত সময় পার করছেন। একটি সভ্য দেশের জনগণ সরকারি সব ধরনের কর আদায়ের পর এভাবে প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বন্দি ও জিম্মি দশায় থাকবেন কেন? এমনটাই এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।

জেল থেকে বেরিয়ে ভয়ঙ্কর এই সব অপরাধের সাথে পুনরায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। এসব বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরিতেও রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা এদের আক্রমণ হতে সাংবাদিকও এখন রেহাই পাচ্ছে না। এসব অপরাধ ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে সাথে সাথেই টোকাই শ্রেণীর এই সব কিশোর অপরাধীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদলবলে আক্রমণ করে বসে। এদের অবৈধ অর্থের ভাগ-বাটোয়ারায় শরিক হয় কতিপয় অসাধু চক্র। যা এখন ওপেন সিক্রেট। এই সব অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনার পেছনে মূলত কোনো এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।

বর্তমানে সম্পূর্ণ চকবাজার ফুলতলার মোড় এলাকাটি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে একটি অসুস্থ রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স বের হবার কোনো সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ রাস্তা জুড়ে এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক ও চালকের অবৈধ দাপট এবং অবৈধভাবে বসা ভাসমান ভ্যানগাড়ি হতে চাঁদা আদায়কারী কিশোর অপরাধীদের কাছে এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়া অসহায় স্থানীয় দোকানদার ও ভবন মালিকেরা।

কথায় বলে অর্থই সকল অনর্থের মূল। গ্যাং চালানো এবং সদস্য যোগানের জন্য যে আর্থিক ব্যয় হয়, প্রতিমাসে সেই অর্থের মূল যোগানটা আসে এই সব খাত হতে। গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভয়ঙ্কর আক্রমণের প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব। সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয়ের কড়া নির্দেশনা থাকার পরেও দৃশ্যমান হতে দেখা যাচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

পিতা মাতার আদরের সন্তানটি প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দ্বারা সৃষ্ট এসব মৃত্যু ফাঁদের রাস্তা দিয়ে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে সহ পথচারীরা একাধিক দুর্ঘটনার শিকার হলেও কার্যত বিষয়টির উপর প্রশাসন স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এখনো। বিষয়টি মূলত এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে— “বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে?”

এলাকা জুড়ে ক্রমশ এমন অপরাধ চলতে থাকলে একসময় মানুষের আস্থা উঠে যাবে প্রশাসনের উপর। কাজেই মানুষ কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে চায়। অন্যথায় রাষ্ট্রের রাজস্ব প্রদানকারী নাগরিকেরা অধিকার হারাচ্ছে সুস্থ ধারায় জীবন যাপনের সুন্দর পরিবেশ হতে। এমন তথ্যই পাওয়া গিয়েছে একাধিক স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে।

তারা মনে করেন যতদিন এসব ভাসমান ভ্যান এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংযোগ এখানে বিরাজমান থাকবে, ততদিন এলাকাটি মাদক কারবারিদের মাদক বেচাকেনার নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। অভিযোগ দেওয়ার পরেও ব্যবস্থা নেয় না দায়িত্বশীল পদে থাকা লোকজন। আগাম সতর্কবার্তা পেয়েও ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ থাকা কর্তব্য অবহেলা করা লোকজন হতে সাধারণ মানুষ কি আশা করতে পারে, এমনটাই ক্ষোভ জানালেন কয়েকজন স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের অভিভাবক।

এই এলাকায় পুলিশ চাইলেও দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অপরাধীদের ধরতে পারবে না। কারণ তারা অপরাধীদের পাতানো ফাঁদে আটকে যেতে বাধ্য। অন্যদিকে অপরাধী চক্রের সদস্যরা যে কোনো পুলিশি অভিযানের ক্ষেত্রে পালিয়ে যাবার এক বিশাল শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করছে ফুলতলা মোড়ে রোজকার জমজমাট যানজটকে। ঘটনাস্থল হতে পুলিশ আসার আগে পালিয়ে যাবার যে সময় প্রয়োজন তার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি সময় তারা পেয়ে যাচ্ছে ফুলতলার মোড়ে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও ভ্যানের দ্বারা সৃষ্ট যানজট ও প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে।

স্থানীয়রা অভিযোগে আরো বলেন, এখান থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদার একটা বড় অংশ সরাসরি চলে যাচ্ছে সুনির্দিষ্ট চেয়ারে বসা ব্যক্তিদের পকেটে। এলাকাবাসী এখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এই সব অবৈধ ভাসমান ভ্যান ও অটোরিকশার দৌরাত্ম এবং কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে।

তারা মনে করেন, এদের দমন করা না গেলে এবং এসব খাত হতে আয়ের সিংহভাগ চাঁদার অর্থ আদায় করা বন্ধ না হলে এলাকা ভিত্তিক কিশোর অপরাধ দমন করা কখনোই সম্ভবপর হবে না। বরঞ্চ প্রতিদিন অপরাধের মাত্রা ইঞ্চি ইঞ্চি হারে বাড়তে থাকবে। যা একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই সব অপরাধের মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে সমুদয় পরিবেশকে মাদক, জুয়া, সন্ত্রাস মুক্ত করার লক্ষ্যে এখনই পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এলাকা জুড়ে। একাধিক উপযুক্ত প্রমাণ থাকার পরেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কালো ইঙ্গিতে অনেক সময় মামলা নেয়া হচ্ছে না থানায়। এদের পেশি শক্তি ও অবৈধ অস্ত্রের কাছে এলাকাবাসী এখন অসহায় ও জিম্মি দশা পার করছে।

 

তাই তারা মাননীয় সিটি মেয়রের নির্দেশনাকে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ, ডিবি এবং র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, আমাদের রোজকার দুর্ভোগ লাঘবের চাবিকাঠি এখন প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের হাতে। তাই সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এলাকাবাসী গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ের উপর প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি জানান সংবাদপত্রের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *