আল-আকসা ও পশ্চিম তীরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের হুমকি ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও ইহুদি আধিপত্য প্রতিষ্ঠার হুমকি আরও স্পষ্ট করলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। এক্স (সাবেক টুইটার)–এ দেওয়া এক উস্কানিমূলক পোস্টে তিনি বলেন, “আল-আকসা ও পশ্চিম প্রাচীর এখন ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।” পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জেরুজালেমে পূর্ণ দখলদারিত্ব আরও জোরদার করা হবে।”

রবিবার (৩ আগস্ট) ‘তিসা বা’আভ’ দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক পোস্টে কাটজ লেখেন,

“তিসা বা’আভের দিন, দ্বিতীয় টেম্পল ধ্বংসের দুই হাজার বছর পর, পশ্চিম দেওয়াল এবং টেম্পল মাউন্ট (আল-আকসা চত্বর) আবারও ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে।”

তিনি আরও জানান, জেরুজালেমের ঐতিহাসিক পশ্চিম প্রাচীরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে প্রার্থনা করেছেন। সেখানে তিনি জিম্মি ইসরায়েলি সেনাদের মুক্তি, দেশের ‘নিরাপত্তা’ এবং গাজায় হামাসের ‘সম্পূর্ণ পরাজয়ের’ জন্য প্রার্থনা করেন।

“ঘৃণাকারীরা থেমে নেই, আমরাও থামবো না”: হুমকির সুরে কাটজ

একই পোস্টে ইসরাইল কাটজ আরও বলেন,

“ইসরায়েলকে ঘৃণা করা লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা জেরুজালেম, পশ্চিম দেওয়াল ও আল-আকসা মসজিদে আমাদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করে তুলবো।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি উস্কানিমূলক রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন এবং ধর্মীয় পবিত্র স্থানসমূহে দখলদার নীতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

আল-আকসায় প্রার্থনা করলেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী, সৌদির নিন্দা

একই দিন, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির আন্তর্জাতিক আইন ও ঐতিহ্য লঙ্ঘন করে আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করে প্রার্থনা করেন। যদিও ইসলামি ঐতিহ্য ও স্ট্যাটাস কো অনুযায়ী, ইহুদিদের সেখানে প্রার্থনা নিষিদ্ধ।

এই ঘটনায় সৌদি আরব তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে,

“আল-আকসা মসজিদে দখলদার ইসরায়েলি সরকারের কর্মকর্তাদের বারবার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।”

তারা এসব পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের প্রতি ‘চরম অবমাননা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে

পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ঐতিহাসিকভাবে এটি ফিলিস্তিনিদের তত্ত্বাবধানে থাকলেও ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ইসরায়েল এই দখলদারিত্বকে বৈধ করার চেষ্টা করছে—রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয়ভাবেই।

সম্প্রতি ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী নেতারা একের পর এক মন্তব্য ও পদক্ষেপের মাধ্যমে ‘টেম্পল মাউন্ট’ তথা আল-আকসা চত্বরে ইহুদি উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এর ফলে অঞ্চলজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছে ফিলিস্তিনি প্রশাসন ও মুসলিম বিশ্ব।

বিশ্লেষণ: ধর্মীয় দখলদারিত্ব নাকি নিরাপত্তা?

ইসরায়েল সরকারের ভাষায় এসব পদক্ষেপ ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ হলেও বাস্তবে এগুলো ধর্মীয় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার এক চেষ্টার অংশ—মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দমন–পীড়ন, উপাসনালয়ে আগ্রাসন, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও জমি দখলের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল এই নীতি অনুসরণ করে আসছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ ও ‘আন্তর্জাতিক চুক্তি পরিপন্থী’ বলেও অভিহিত করছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদ বা আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো থেকে এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *