স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ক্ষুধার্ত পরিবারে খাবার জোগাড় করতে গিয়েছিল মাত্র ১৫ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু—আবদুল রহমান আবু জাজার। কিন্তু সেই মানবিক প্রয়াসই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত জিএইচএফ (গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান ফান্ড) পরিচালিত এক ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে জাজার তার বাঁ চোখে গুরুতরভাবে আহত হয়। এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে।
ঘটনাটি ঘটেছে ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে, যেখানে অবরুদ্ধ ও বিধ্বস্ত জনজীবনে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম চালাচ্ছে লাখো মানুষ। গাজায় চলমান ইসরায়েলি বোমা হামলা ও অবরোধের ফলে বাসিন্দারা চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। হাসপাতালগুলো ভেঙে পড়েছে, দোকানপাট বন্ধ, এবং অধিকাংশ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
চিকিৎসকদের বরাতে জানা গেছে, শিশু জাজারের বাঁ চোখে গুলি ঢুকে ভেতরে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তার ওপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তবে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, সে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে কিনা।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় সাদা ব্যান্ডেজে বাঁ চোখ ঢাকা জাজার আল জাজিরাকে জানায়, “আমাদের ঘরে খাবার ছিল না। ভাইবোনদের জন্য কিছু খুঁজতেই আমি বের হয়েছিলাম। প্রথমবারের মতো গিয়েছিলাম ওই ত্রাণকেন্দ্রে। তখন দিবাগত রাত প্রায় দুইটা।”
জাজার আরও বলে, “আল-মুনতাজাহ পার্কের কাছে পৌঁছাতে আমার পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। অনেক ভিড় ছিল। আমরা দৌড়াচ্ছিলাম। ঠিক তখনই তারা গুলি করা শুরু করে। আমি আরও তিনজনের সঙ্গে ছিলাম, সবাই আহত হয়।”
গুলির সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁপা কণ্ঠে জাজার বলে, “আমি হঠাৎ শরীরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো কিছু অনুভব করি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যাই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর আশপাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করি, আমি কোথায়?”
তারা তখন জানায়, “তুমি গুলিবিদ্ধ হয়েছো।”
জাজার আরও জানায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও সেনারা গুলি ছুড়তে থাকে, যেন নিশ্চিত মৃত্যু নিশ্চিত করতে চায়।
“ওরা অনবরত গুলি চালাচ্ছিল। আমি দোয়া পড়ছিলাম। খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, এখনই মরে যাবো।”
চিকিৎসকরা জানান, তার দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবু জাজার এখনো আশাবাদী। ব্যান্ডেজে মোড়ানো চোখ নিয়েও সে বলে, “আশা করি, আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে।”
বন্দিশিবিরে পরিণত গাজা, শিশুদের শরীর এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র
এই ঘটনা গাজার হাজারো শিশুর দুর্দশার প্রতীক। যেখানে খাবার খুঁজতে বের হওয়াও প্রাণনাশের শামিল। ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় শিশু, নারী, বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। শিশুদের শরীর এখন শুধু ক্ষুধার আঘাত নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রেরও চিহ্ন বহন করছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ’, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এবং ‘দমন-পীড়নের কৌশলগত প্রয়োগ’-এর অভিযোগ তুলেছে।
তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আন্তর্জাতিক সমাজের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়।