মোঃ দিলুয়ার হোসেন:
শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস আর নেই। শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে সিলেটের মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। রোববার সকলের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকালে সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির কার্যালয় প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে দিরাই মিলনবাজার হয়ে শাল্লা উপজেলা সদর ঘুঙ্গিয়ারগাঁও কেন্দ্রীয় কালী মন্দির প্রাঙ্গণে, পরে শহীদ আলী ফুটবল খেলার মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।
অ্যাড. অবনী মোহন দাস ছিলেন শাল্লা উপজেলার রাজনীতির এক উজ্জ্বল মুখ। তিনি দীর্ঘদিন আইনপেশায় যুক্ত থাকলেও জনসেবার উদ্দেশ্যে আইনজীবী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে রাজনীতিকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন। মানুষের ভালোবাসা ও আস্থায় শিক্ত হয়ে তিনি দুইবার শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০২৩ সালের ৩০ জুলাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নিজ প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। শাল্লা উপজেলা সদরে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন,
“বিভেদ সৃষ্টি করতে নয়, আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বাঙালি জাতির সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধরে রেখে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।”
অ্যাড. অবনী মোহন দাস শুধু একজন রাজনীতিকই নন, তিনি ছিলেন মানবিক গুণে গুণান্বিত একজন সমাজসেবক। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে শাল্লা উপজেলা ও আশপাশের এলাকাজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক সহকর্মী ও প্রতিপক্ষ নেতারাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিরাই-শাল্লার সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী এক শোকবার্তায় বলেন,
“অ্যাড. অবনী মোহন দাস ছিলেন একজন সৎ, দৃঢ়চেতা এবং সমাজবান্ধব রাজনীতিক। তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতির অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো।”
আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন,
“তিনি ছিলেন মানুষের নেতা। তাঁর অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে শাল্লার মানুষ।”
শাল্লাবাসী আজ হারিয়েছে এক প্রজ্ঞাবান, আপসহীন এবং আপাদমস্তক জননেতাকে—যাঁর জীবন ছিল মানুষের জন্য, মানুষের পাশে। পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। পরে তাঁর নিজ বাড়িতে মাহমুদ নগর গ্রামের মহাশ্মশানে শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও নাতি রেখে যান। অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।