জ্বালানির সংকটে ‘সুন্দরী ফল’ই ভরসা সাগরকূলের মানুষের

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:


সাগরকূলবর্তী এলাকায় দ্রুত ম্যানগ্রোভ বন উজাড় হওয়ায় চরম জ্বালানি কাঠের সংকটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একসময় জ্বালানির প্রধান উৎস ছিল এই বনাঞ্চলের গাছপালা, যা এখন প্রায় বিলীন। তাই এখন গভীর সমুদ্র থেকে ভেসে আসা সুন্দরী গাছের ফল সংগ্রহ করেই রান্নার জ্বালানির চাহিদা পূরণ করছেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সাগরপাড়ের শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু।

স্থানীয়রা জানান, এটি মূলত সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের ফল। সাধারণত সুন্দরবনের এলাকা থেকে এসব ফল সমুদ্রের নোনাজলের স্রোতে ভেসে উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঢেউয়ের ঝাপটায় ফলগুলো উপকূলীয় সৈকত এলাকায় জমা হয়। বাসিন্দারা এসব ফল সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে ভিতরের ফল ফেলে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।

জেলে মনির বলেন, “আগে বন থেকে সহজেই লাকড়ি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মাইলের পর মাইল হাঁটলেও তা মেলে না। তাই এই সুন্দরী ফলই আমাদের ভরসা।”

গৃহবধূ মনিরা জানান, “লাকড়ির দাম বেড়ে গেছে। রান্নার জন্য আমাদের এখন সমুদ্র থেকে ভেসে আসা সুন্দরী ফলই সংগ্রহ করতে হয়। না হলে রান্না করা অসম্ভব।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর সমুদ্রভাঙনে বনাঞ্চল হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটা, নতুন দালান স্থাপন ও বসতি বিস্তারের কারণে কয়েক বছরের মধ্যেই কুয়াকাটার আশপাশের ম্যানগ্রোভ বন ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। ফলে রান্নার জ্বালানির জন্য লাকড়ি জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন গ্রামবাসী।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ম্যানগ্রোভ ধ্বংস শুধু লাকড়ির সংকটই নয়, উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ম্যানগ্রোভ বনের ধ্বংস একটি ভয়াবহ সংকেত। এর প্রভাব কেবল জ্বালানির সংকটে সীমাবদ্ধ নয়, বরং উপকূলের নিরাপত্তা ও পরিবেশের ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে। দ্রুত বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করা এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা জরুরি।”

পরিবেশবিদরা দ্রুত বনায়ন ও বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *