স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এর প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি বলেন, “এক বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছিল। ওই দিনই পলাতক ফ্যাসিস্ট শাসক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, এবং দেশের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।”
তারেক রহমান বলেন, “স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য এটি একটি আনন্দ ও বিজয়ের দিন। অন্তর্বর্তী সরকার এই দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তা এখন থেকে প্রতি বছর সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হবে।”
দেড় হাজার শহীদ, ৩০ হাজার আহত: গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন তারেক রহমান
বক্তব্যে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, “মাত্র এক বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি, কতো বড় মূল্য দিয়ে আমাদের এই মুক্তি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে শহীদ হন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, নারী-শিশু কেউই রেহাই পায়নি। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। তাঁদের অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গু বা অন্ধ হয়ে গেছেন।”
তিনি বলেন, “হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে কোলের শিশু, ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ—এই সাহসী সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। এই শহীদদের ঋণ আমাদের শোধ করতেই হবে—মানবিক, গণতান্ত্রিক ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে।”
“৭১ সালে ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, ২৪ সালে ছিল তা রক্ষার”—তারেক রহমান
বক্তব্যে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের তুলনা করে বলেন, “১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সাল ছিল সেই স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। দেশের মানুষ আবারও প্রমাণ করেছে, তারা কখনো ফ্যাসিবাদকে মেনে নেয়নি, নেবে না।”
‘আয়নাঘর’, গুম, নিপীড়নের বিভীষিকা স্মরণ
তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের সময় গুম, খুন, অপহরণ ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। গড়ে তোলা হয়েছিল শত শত গোপন বন্দীখানা, যেগুলো ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত ছিল। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী কিংবা কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেকেই আজও নিখোঁজ। সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত।”
‘ব্যক্তিতন্ত্র ও লুটপাটের চূড়ান্ত রূপ দেখেছি’
তারেক রহমান দাবি করেন, “দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত সব কিছু ব্যক্তির ইচ্ছানির্ভর ছিল। ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছিল। এমনকি শিক্ষাব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বই-খাতা নয়, শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল হাতুড়ি, চাপাতি।”
‘৫ আগস্ট পালিয়েছিল সরকার, জনগণের বিজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী’
বিএনপি নেতা বলেন, “৫ আগস্ট শুধু একটি তারিখ নয়। এটি হচ্ছে এক তামসিক অধ্যায়ের অবসান এবং নতুন দিনের সূচনা। এই দিনে গণভবন ছেড়ে পালিয়েছে ফ্যাসিস্ট। সংসদ ভবন ফেলে পালিয়েছে সাংসদরা। প্রধান বিচারপতি, প্রধান খতিব, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সবাই পালিয়েছেন। কিন্তু এখনও এই চক্রের কোনো অনুশোচনা নেই।”
‘ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু আর কোনো ফ্যাসিবাদ নয়’
তিনি সব রাজনৈতিক দলকে সতর্ক করে বলেন, “গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকবে, সেটিই তার সৌন্দর্য। কিন্তু এই ভিন্নমত যেন কখনোই ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ বা চরমপন্থার পুনর্বাসনের পথ হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
‘জনগণের সরকার গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ’
বক্তব্যের শেষ অংশে তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সরাসরি ভোটে, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এই জয়, এই পথচলা যেন কখনো বাধাগ্রস্ত না হয়—সেই জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে।”