বিএনপির মনোনয়ন: ত্যাগ, জনপ্রিয়তা ও দক্ষতাই এখন মূল বিবেচনা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে পত্র দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এই পত্রের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সময় নিয়ে সব ধোঁয়াশার অবসান ঘটেছে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনী উত্তাপ স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছয় মাস আগেই নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। যেসব প্রার্থী ইতোমধ্যে দলের আস্থা অর্জন করে ফেলেছেন, তারা মাঠে নেমে পড়েছেন পুরোদমে। অন্যদিকে অনেকে এখনো প্রার্থিতার সবুজ সংকেত পাওয়ার অপেক্ষায়। সবমিলিয়ে রাজনীতির মাঠে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে

রাজনীতির মাঠে এ মুহূর্তে সবচেয়ে সক্রিয় দল বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটি যেহেতু দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি এবং রাজপথের দীর্ঘ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। ফলে অনেক আগে থেকেই বিএনপির নেতারা নির্বাচনী আসনের ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে তিন ধাপে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের জরিপ পরিচালিত হয়েছে। প্রথম দুটি জরিপ শেষে এখন তৃতীয় জরিপ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০ জন সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। বাকি আসনগুলোতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপি সারা দেশের সব আসনের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থী করা হবে। গণমানুষের সঙ্গে যার যোগসূত্র সবচেয়ে বেশি, তিনিই দলের মনোনয়নে অগ্রাধিকার পাবেন।

তরুণ ভোটার ও নিরপেক্ষতার প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন স্মরণকালের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও নিরপেক্ষ হতে যাচ্ছে। তাই তরুণ ভোটাররা একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই জীবনের প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন, ফলে প্রার্থীদেরকে কেবল মার্কা নির্ভর না হয়ে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, প্রচারের ধরন আগের মতো থাকবে না। এবার সোশ্যাল মিডিয়া বিশাল ভূমিকা রাখবে। তরুণ ভোটারদের প্রভাব ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নির্বাচনের ধরন আমূল বদলে দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে এবার প্রার্থী নির্ধারণে সতর্ক থাকতে হবে। যোগ্যতা, নেতৃত্ব, ভিশন, সততা ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই এবার প্রার্থীর প্রধান যোগ্যতা হবে। শুধুমাত্র অর্থবল কিংবা রাজনৈতিক লবিংয়ের মাধ্যমে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক কম।

অন্যান্য দলের তৎপরতা

বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ২৯৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদ প্রথম ধাপে ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও ২২৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

গণ-অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া নেতা ও সমন্বয়কারীদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই। দলটির অন্তত ৪০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন দলের গ্রহণযোগ্যতা নয়, বরং প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবং ভোটারের মন জয়ের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে, এমন প্রার্থী বাছাই করা যিনি ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারেন। ভুল প্রার্থী বাছাই নির্বাচনের ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেও সতর্ক করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন সবার জন্যই জরুরি। বিএনপি সহনশীলতার মাধ্যমে এগোচ্ছে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক মাইলফলক। ভোটারদের সিদ্ধান্ত এবার নির্ধারণ করবে কোন দল বা প্রার্থী দেশের নেতৃত্বে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *