‘ভারত সমর্থিত’ বিদ্রোহীদের হামলায় পাকিস্তানে তিন সেনা নিহত

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 


পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের মাস্তুং এলাকায় ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলায় দেশটির সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ তিনজন সদস্য নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা (আইএসপিআর) দাবি করেছে, এই হামলা চালিয়েছে ‘ভারত সমর্থিত’ বিদ্রোহী সংগঠন ‘ফিতনা আল-হিন্দুস্তান’। ঘটনায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তুলেছে তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ও বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরের মাঝামাঝি সময়ে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়, মাস্তুং এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়িতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তিন সদস্য।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—

  • মেজর মোহাম্মদ রিজওয়ান তাহির (৩১), যিনি পাঞ্জাবের নারোয়াল জেলার বাসিন্দা;

  • নায়েক ইবনি আমিন (৩৭), সোয়াবি জেলার বাসিন্দা;

  • ল্যান্স নায়েক মোহাম্মদ ইউনুস (৩৩), যিনি কারাক জেলার অধিবাসী।

প্রতিহিংসা অভিযানে নিহত ৪ বিদ্রোহী

হামলার পরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলাকায় অভিযানে নামে। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, পাল্টা অভিযানে অন্তত চারজন ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। মাস্তুং এলাকাজুড়ে ব্যাপক সেনা মোতায়েন ও অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুরো এলাকা ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ

আইএসপিআরের ভাষ্যমতে, ‘ফিতনা আল-হিন্দুস্তান’ নামের এই সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা –এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিচালিত হয়। ভারত তাদের এই প্রক্সি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই অভিযোগ নতুন নয়—তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ভাষ্য আরও সরাসরি ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা ও জাতীয় শোক

ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানান। তিনি বলেন,

“এই আত্মত্যাগ কেবল ব্যক্তিগত নয়, পুরো জাতির। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এমন এক প্রাচীর, যাকে নাড়িয়ে দেওয়া সহজ নয়। আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হবই।”

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাহসিকতা ও আত্মবলিদান জাতিকে গর্বিত করেছে এবং সরকার সন্ত্রাস নির্মূলে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।


বিশ্লেষণ: নতুন প্রক্সি যুদ্ধের সূচনা?

এই হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়ায় দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি যে আরও জটিল হয়ে উঠছে, এ ধরণের হামলা তা আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষ করে বালুচিস্তানে বিদ্রোহ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা—উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *