শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বালিখা ইউনিয়নে ভূয়া কাজী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্যতম অভিযুক্ত আরিফ রব্বানী গ্রেফতার। বুধবার সন্ধ্যায় আলোচিত যুবলীগ নেতা ও স্বঘোষিত ভূয়া কাজী আরিফ রব্বানীকে বালিখা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে তারাকান্দা থানা পুলিশ। তিনি ছিলেন ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। জনমনে স্বস্তি ফিরলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে — একাধিক লিখিত অভিযোগ, গণদাবি ও সাংবাদিক প্রতিবেদন সত্ত্বেও এতদিন কেন প্রশাসন নীরব ছিল? আর কেনইবা অন্য অভিযুক্তরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে?
ভূয়া রেজিস্ট্রেশন ও বাল্যবিবাহের ভয়াবহ চিত্র!
সরকারি অনুমোদন না নিয়ে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন করে চলেছে একাধিক ব্যক্তি—ভূয়া বালাম বহি, জাল কাগজ ও রাজনৈতিক পরিচয়ে চালানো হয় এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। যার পরিণতিতে ঘটছে একাধিক বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ, আইনি বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক ক্ষতি। ভুক্তভোগী বৈধ কাজী মো. রাশিদুজ্জামান চকদার লিখিত অভিযোগে জানান, চক্রটি তাকে হুমকি, গালিগালাজ এমনকি প্রাণনাশের ভয় দেখিয়েছে। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ২০২০ সাল থেকে। অভিযোগে উঠে এসেছে—ফয়সাল আহমেদ ছফির (সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগ বালিখা ইউনিট), আবুল মুনসুর, মোজাম্মেল হক সরকার, এমদাদুল হকসহ আরও অনেকে এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।
প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা!
প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা গেছে, অভিযোগ বারবার ইউএনও জাকির হোসাইন ও ওসি মোহাম্মদ টিপু সুলতান বরাবর লিখিতভাবে দেওয়া হলেও তদন্ত বা মামলা হয়নি। বরং অভিযোগকারীদের বলা হয়েছে, “থানায় যান” বা “ইউএনও অফিসে দেন” — এই পাস-পাস খেলা চলেছে বছরের পর বছর। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই নীরবতা নিছক অবহেলা নয়, বরং প্রশাসনের কিছু অংশের নীরব সহযোগিতা থাকতে পারে।
আইনি দৃষ্টিকোণ: অপরাধ কতটা গুরুতর?
-
দণ্ডবিধি ৪৬৮ ধারা: জাল কাগজে রেজিস্ট্রেশন—সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড।
-
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭: সহায়তাকারী—সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা।
-
দণ্ডবিধি ৫০৬ ধারা: সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তকে হুমকি—শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সচেতন নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের দাবি:
১. নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. ভূয়া কাজীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে।
৩. ভুক্তভোগী পরিবারদের সুরক্ষা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৪. অভিযোগের আলোকে ইউএনও ও ওসির ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রশ্ন থেকেই যায়—আরিফ রব্বানী হয়তো কোর্ট ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন, তাই পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু বাকি অভিযুক্তরা কেন এখনও ধরা পড়েনি? কেন প্রশাসন এতদিন অপেক্ষা করেছে? এই গ্রেফতার বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু — এ প্রশ্ন আজ তারাকান্দা ছাড়িয়ে পুরো দেশের নাগরিকদের মনে। দায়সারা নয়, চাই দৃঢ় ব্যবস্থা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ধরনের ভূয়া কাজী সিন্ডিকেট শুধু সামাজিক অবক্ষয়ের নয়, প্রশাসনিক দুর্বলতারও নগ্ন প্রতিচ্ছবি। দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে, আরিফ রব্বানীর গ্রেফতারও রয়ে যাবে লোক দেখানো পদক্ষেপ হিসেবেই।