স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মোমেন বলেছেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠুক না কেন, যদি সেটি সুনির্দিষ্ট হয় তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছে—এমন উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “দুদকে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করব এবং একে একে সব অভিযোগের নিষ্পত্তি করব। দুর্নীতি দমনে আমাদের কার্যক্রম জনগণের সহযোগিতায় সঠিকভাবে এগিয়ে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
‘রুখবো দুর্নীতি, গড়বো দেশ—হবে সোনার বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে সোমবার সকালে জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের উদ্যোগে আয়োজিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, “দুর্নীতি দমন শুরু করতে হবে নিজেদের ভেতর থেকে। প্রথমেই নজর দিতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজস্ব অফিস ও কর্মকর্তাদের দিকে। আমাদের মধ্যে যদি কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আগে সেটি দূর করতে হবে। সেবা প্রদানকারীর সংখ্যা দেশে কম হলেও, ক্ষমতা তাদের হাতেই বেশি। তারা চাইলে জনগণের কাজ সহজ করে দিতে পারেন, আবার কঠিনও করতে পারেন। তবে বাস্তবতা হলো—সব কাজ তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব নয়, কারণ অনেক বিষয় মামলাজটের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
তিনি স্বীকার করেন, দুর্নীতি দমন একটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে জয়পুরহাটকে দেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
জেলা প্রশাসক আফরোজা আক্তার চৌধুরীর সঞ্চালনা ও সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) আক্তার হোসেন, দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক এবং জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে জেলা সদরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে গিয়ে হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার সেবাপ্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে সরাসরি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এ গণশুনানিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল, জেলা পরিষদ, জয়পুরহাট চিনিকল, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জয়পুরহাট থানা, পৌরসভা, ভূমি অফিস, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ৬৭টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
এ সময় সেবাগ্রহীতাদের অধিকাংশ অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান। পাশাপাশি কয়েকটি অভিযোগ দুদকের পক্ষ থেকে নিজস্বভাবে তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে জেলার সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান প্রধান, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।