হাসান আলী:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনগণের সমর্থনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সবার জন্য কর্মবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে আয়োজিত ‘যুব সমাজের প্রত্যাশা ও বিএনপির পরিকল্পনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্লোগান নয়, বাস্তব প্রতিশ্রুতি
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, “স্লোগাননির্ভর রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে। বিএনপি শুধু প্রতিশ্রুতি দেয় না, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্বাস করে। জনগণের রায়ে যদি বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, তাহলে দেশের সব পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের জীবনমান উন্নয়নের সব পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে বিএনপির প্রতি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রয়োজন। জনগণের শক্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগামী নির্বাচনে সর্বস্তরের সহযোগিতা ও সমর্থন অত্যাবশ্যক।”
নিরাপদ ও কর্মবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য
তারেক রহমান বলেন, “নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা হবে বিএনপির মূল রাজনীতি। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে এসে আমরা যদি সহনশীল ও সমঝোতার রাজনীতি চালাই, তাহলে দেশের সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।”
প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা
বক্তব্যের শুরুতে তিনি প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারেক রহমান বলেন, “তরুণদের প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করা দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ উদ্যোগ বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী। যুবসমাজের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং কর্মস্পৃহা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি এও বলেন, “যুবসমাজ যদি বিপদগামী হয় বা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ে, তবে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনধারাকে বদলে দিচ্ছে। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে প্রচলিত কাজের বাজার হ্রাস পাচ্ছে, একই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এজন্য দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন জরুরি।”
যুবশক্তিকে সম্ভাব্য সম্পদ হিসেবে ব্যবহার
তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনসংখ্যা হতে পারে আমাদের একমাত্র সাফল্য ও সমৃদ্ধির নিয়ামক। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন কর্মক্ষম, তখন এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হিসেবে দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, যুবশক্তিকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় দক্ষ করার পাশাপাশি খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করতেও উৎসাহিত করা হবে। ক্রীড়া শিক্ষা কারিকুলামের অংশ হতে পারে, যাতে পেশাদারিত্বও তৈরি হয়।
পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা
সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “দলটি আগামী দিনে সরকার গঠন করতে পারে—সেজন্য আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বিএনপিকে খাটো দেখানোর চেষ্টা চলছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, নির্বাচনের আগে এবং পরে কেউ বিএনপির দিকে আঙুল তুলতে না পারে। নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নেতা তার নিজস্ব সংগ্রামের মাধ্যমে নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনা সম্ভব করেছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।”
আলোচনায় অন্যান্য অতিথিরা
সভা সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানী। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
সভায় বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম খান, নাট্য নির্মাতা মাসরুর রশীদ বান্নাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাফসির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।