স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
গত বছরের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের পতনের প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের পদচারণা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির বিভিন্ন আসনে প্রবীণ নেতাদের সন্তানরা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আসছেন। অনেকের পিতা একাধিকবার সংসদ-সদস্য ছিলেন, কেউ আবার ছিলেন মন্ত্রী বা এখনো জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিগত সরকারের সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, মামলা-হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব তরুণ নেতা ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত। জীবিতরা থেকেও বেশিরভাগই প্রবীণ। প্রয়াত নেতাদের সন্তানদের অনেকেই এখন দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। এছাড়া, বর্ষীয়ান নেতাদের সন্তানরাও বিএনপির রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে মনোনয়ন চান অন্তত অর্ধশত নেতা, যাদের মধ্যে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মাহমুদুর রহমান সুমন, নিপুণ রায় চৌধুরী, ইসরাফিল খসরু, মঞ্জুরুল করিম রনি, সাঈদ আল নোমান, ইশরাক হোসেন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ পূর্ববর্তী নির্বাচনে ধানের শীষের টিকিটও পেয়েছিলেন।
পঞ্চগড়-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, যিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে। যশোর-৩ আসনে মনোনয়ন চান খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক (ভারপ্রাপ্ত) সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে। ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।
পটুয়াখালী-২ আসনে মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার ছেলে, কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু প্রার্থী হতে পারেন। চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, প্রার্থী হতে চান সিলেট-১ আসনে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঢাকা-৩ আসনে মনোনয়ন চান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন মনোনয়ন চান।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু প্রার্থী হতে পারেন। চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান মনোনয়ন প্রত্যাশী। গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৪ আসনে জেলা ও মহানগর নেতাদের সন্তানরাও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। এছাড়া ঢাকা, নওগাঁ, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির প্রবীণ নেতাদের সন্তানরা মনোনয়ন প্রত্যাশী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন, “দেশে তরুণ ভোটারের সংখ্যা বেশি। তাই সব রাজনৈতিক দলই এখন তরুণ প্রার্থীদের গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে। তবে পরিবারজনের কারণে হঠাৎ প্রার্থী করলে তা গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যদি প্রার্থী ক্লিন ইমেজের, জনপ্রিয় এবং দলের প্রতি নিবেদিত হয়, তবে তা দলের জন্য লাভজনক।”