স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন বৈঠক ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ভারতের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, যা আরও কড়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, “রাশিয়ার তেল কেনার জন্য আমরা ভারতের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছি। যদি পরিস্থিতি ভালো না হয়, তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা এই সেকেন্ডারি শুল্ক আরও বাড়তে পারে।”
তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকেও এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। বেসেন্ট বলেন, “ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছেন, আর ইউরোপীয়রা পাশে বসে মন্তব্য করছে তিনি কী করবেন বা কীভাবে করবেন। ইউরোপীয়দেরও আমাদের সঙ্গে সেকেন্ডারি স্যাংশন অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে হবে।”
এর এক দিন আগে ফক্স বিজনেসকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় ‘অনমনীয়’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, তাদের শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার ভারতকে ‘শুল্ক অপব্যবহারকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
আগেই দ্বিগুণ শুল্ক
চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতের ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা যুক্ত করে। এর ফলে ভারতের কিছু পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করছে। ট্রাম্প বুধবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “মস্কো যদি শান্তিচুক্তিতে রাজি না হয় তবে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।” শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কার অ্যাংকারিজে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের রুশ তেলের ওপর নির্ভরতা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সস্তা রুশ তেল আমদানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে ভারত। ২০২১ সালে যা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫-৪০ শতাংশে। এই প্রবণতা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে টানাপোড়েনে ফেলেছে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে।
দিল্লি তাদের রুশ তেল কেনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছে যে, একটি বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে সস্তা জ্বালানি কিনে কোটি কোটি দরিদ্র ভারতীয়কে মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব।
আলোচনায় অচলাবস্থা
দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলছে। মার্কিন আলোচক দল আগামী ২৫ আগস্ট ভারতে এসে পরবর্তী ধাপ শুরু করবে। তবে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যে আমদানি শুল্ক কমাতে ভারতের অনীহা আলোচনার বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা
ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন ৫০ শতাংশ শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটি কার্যত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ করে দেবে। এর ফলে ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি কর আরোপিত বাণিজ্য অংশীদার হয়ে যাবে। বিশেষ করে ভারতীয় টেক্সটাইল, গহনা ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পখাত বড় ধাক্কা খাবে। এমনকি ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় আধা শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।