স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, দল কোনো ধরনের উসকানি বা পাতানো ফাঁদে পা দেবে না। সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ধৈর্য সহকারে নির্বাচন পর্যন্ত দলের অবস্থান অটল রাখা হবে। বিএনপি মনে করছে, সরকারের কিছু অংশ, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু খুচরা রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে এবং মূল লক্ষ্য হলো বিএনপিকে প্রতিহত করা।
বিএনপি নেতৃত্ব আশাবাদী, জাতীয় নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি, জামায়াতকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্তিশালীভাবে মোকাবিলা করার জন্য হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে নির্বাচনি মোর্চা গড়ে তুলবে।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সূত্রে জানান, দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যেন কেউ প্রতিপক্ষের পাতানো ফাঁদে পা না দেয় এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয়। বিএনপি আশা করছে, ফেব্রুয়ারিতে কোনো প্রকার বিরোধ বা অজুহাত সৃষ্টি করে নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করা হবে না। দল ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণার সমস্ত বিষয়কে সম্মান জানিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করেছে। এখন শুধু বাকি রয়েছে ‘জুলাই সনদ’। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে এবং ছাড় দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নেতারা মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন ফাঁদ পাতা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে মাথায় রেখে ধৈর্যসহকারে কৌশলে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করবে।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে, যারা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে স্থায়ী যোগাযোগ রাখবেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক ইসলামি সংগঠনটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ড, বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি ক্লোজ মনিটরিং করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।” জাতীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “বিএনপি কারও উসকানিতে পা দেবে না। সবকিছু ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। কারণ বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করব।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত একটি পক্ষ নির্বাচনী পরিবেশকে ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। ‘রাতের বেলায় সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে বিভিন্ন হলে হানা দেওয়া, ভাইস চ্যান্সেলরকে দিয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করানো’—এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, “প্রচেষ্টা চলছে রাজনৈতিক ও নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার। ফেব্রুয়ারিতে যাতে নির্বাচন না হয়, এজন্যে পরিকল্পিতভাবে একটার পর একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য রাখছি। নেতা-কর্মীরা যেন কোনো পাতানো ফাঁদে পা না দেয়, সে বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তবে আমরা নির্বাচনে কোন দলকে সমর্থন দেব কি না, তা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডের ওপর নির্ভর করবে। সম্প্রতি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ চট্টগ্রামে এসে আমাদের সংগঠনের আমির মাওলানা মুহিব্বল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং দোয়া নিয়েছেন।”
এই অবস্থার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে, বিএনপি এবং সংশ্লিষ্ট ইসলামি জোটগুলো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত ও ধৈর্যশীল কৌশল নিয়েছে। দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই তৎপরতা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।