ঘিওরের ঠাকুরকান্দিতে কবিরাজ মাসুদের কবলে যুবকদের সর্বনাশ — কেউ মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে, কেউ আত্মহত্যায় বাধ্য

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম: 

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামে কবিরাজ মাসুদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে, তার কৌশল ও অদ্ভুত নির্দেশনায় কেউ মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে, আবার কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ইমন নামে এক যুবকের সঙ্গে। ইমনের বাবা রহিম কাজীর পরিবারের অভিযোগ, কবিরাজ মাসুদ তাকে ব্যবহার করে কালী মন্দির থেকে মূর্তির মাথা আনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে ভয় পেয়ে আসার পর থেকে ইমন প্রায় ১৫ দিন ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে, করস্থানে শুয়ে থাকে বা কখনো খালি চকে চলে যায়। বর্তমানে বাড়িতে বন্দি অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে, প্রায় এক বছর আগে একই গ্রামের আলমের ছেলে আলামিনের সঙ্গেও ঘটে অনুরূপ ঘটনা। পরিবারের দাবি, কবিরাজ মাসুদের নির্দেশে কালী মন্দির থেকে মূর্তির মাথা কেটে সিঁদুর এবং কবরস্থান থেকে মৃত মানুষের হার আনতে গিয়ে ভয় পেয়ে আলামিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করেন।

মৃত আলামিনের পরিবারের দাবি, “আমার ছেলেকে দিয়ে কেন এসব করালে? ভালো করে দাও”— এমন অনুরোধে মাসুদ কবিরাজ নাকি বলেছিলেন, “কালী মন্দিরে গিয়ে দুধ, কলা ও কপালে সিঁদুর দিয়ে মূর্তির কাছে ক্ষমা চাইলে ভালো হবে।” কিন্তু সেই চেষ্টা বিফল হয়, আর পরিবার আজও শোকে মুহ্যমান। তাদের দাবি, “এ ধরনের সর্বনাশী কর্মকাণ্ডের জন্য কবিরাজ মাসুদের ফাঁসি হওয়া উচিত, যেন আর কোনো পরিবারের বুক খালি না হয়।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার কবিরাজ মাসুদের বাড়িতে আনুমানিক ২০০–২৫০ রোগী আসে— যার মধ্যে রয়েছে জিনের চিকিৎসা, প্রেম-ভালোবাসার সমস্যা সমাধান ও নানা তাবিজ-কবজের প্রয়োগ। তাছাড়া ভুক্ত আশেকান দিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক মাহফিল দিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে কবিরাজ মাসুদ বলেন, ইমন নামে যুবক এক বছর ধরে সমস্যা ছিল কিন্তু বর্তমানে ৭ থেকে ৮ দিন ধরে বেশি সমস্যা হয়েছে। আট বছর ধরে কবিরাজি পেশায় নিয়োজিত বলে জানান। তবে গোপন সূত্রে জানা গেছে, ইমনের পরিবারকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

স্থানীয়রা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন, যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আর কোনো প্রাণহানি বা মানসিক বিপর্যয় না ঘটে।
এ বিষয়ে ঘিওর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কানিজ শারমিন তামান্না বলেন, কেউ যদি এরকম অভিযোগ দায়ের করে তাহলে আমার মতে আমি ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *