স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি অবশ্যই নির্বাচন চায়, তবে যে কোনো ধরনের নির্বাচন নয়। তাঁর বক্তব্য, “নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন অবস্থায়, যেখানে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য না হলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।”
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি, তেমনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতিও অপরিহার্য। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি দরকার। এখনও দেশে মব সন্ত্রাস চলছে। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে, সাংবাদিকরাও নিরাপদ নয়। এই অবস্থায় দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা জাতীয় পার্টিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের জীবন বৃথা যেতে দেব না। আমরা এমন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। দেশের সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের নিজের দলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন থেকে জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছি এবং বিতর্কিত ধারা বাদ দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের কমিটির পাশাপাশি সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।”
সরকারের সংস্কারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরাও সংস্কারের পক্ষে। কারণ পল্লীবন্ধু এরশাদই দেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তবে সংস্কার কার্যকর করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা জরুরি। তাছাড়া নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, “আমরাও বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাই। কারণ তিনি ওপেন কোর্টে দুই মেয়াদ তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার রায় দিয়েছেন, পরে সেই রায় পরিবর্তন করেছেন। এজন্য অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। তবে তার নামে হত্যা মামলা দেওয়া হবে—এটি মোটেও নয়।”
চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং দলের শীর্ষ নেতারা।
মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও ‘কালো মেঘ’ সৃষ্টি হয়েছে। সকল দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এই অবস্থা কাটানো সম্ভব। যখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই।”
তিনি আরও জানান, “জাতীয় নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আমাদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সম্মেলনে এসে মতামত দিয়েছেন। তা কারও ভালো লাগতে পারে, আবার কারও খারাপও লাগতে পারে। কিন্তু দু:খজনকভাবে তার বাসায় দু’দিন আগে বোমা হামলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
হাওলাদার বলেন, “জাতীয় পার্টি সবসময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একসময় আমাদের স্বৈরাচার বলত, কিন্তু তারা কখনও প্রমাণ করতে পারেনি যে আমরা স্বৈরাচার করি।”