মেঘনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে মিথ্যা মামলা

আবুল কালাম আজাদ: 


কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের নলচর গ্রামে বিষ দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগে রাজু নামের এক যুবককে আটক করেছে গ্রামবাসী। আটকের প্রায় ৫–৭ ঘণ্টা পর নৌ পুলিশের কাছে যুবককে সোপর্দ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, অভিযুক্ত যুবককে এতক্ষণ আটকে রেখে তারা কি করলো! পুলিশকে এত দেরিতে আটকের সংবাদ দেওয়া হলো কেন?

জানা যায়, নলচর গ্রামের ফারুক সরকারের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে একটি মৎস্য ঘের রয়েছে। সেখানে মাছ চুরি করতে গিয়ে আটক হয় রাজু নামের এক যুবক। আটকের পর তাকে নলচর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই নাটক মঞ্চস্থ করার ষড়যন্ত্র করে তারা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ইউএস বাংলার ক্রয়কৃত জমি দখল করে সেখানে মাছ চাষ করছে ফারুক সরকার, যার কোনো বৈধ চুক্তিপত্র নেই।

গোপন সূত্রে জানা যায়, রাজুকে শুক্রবার সকালে আটকের পর অনেক মারধর করা হয় এবং তাকে যে নামগুলো বলতে বলবে সেগুলো যেন সে বলে—এমনটা শিখিয়ে দেওয়া হয়। রাজু মারধর থেকে বাঁচতে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয় এবং যেভাবে নামগুলো বলতে বলে ঠিক সেভাবেই সে নামগুলো বলে। এসময় বাদীপক্ষ চোরের দায়ে আটক রাজুর একটি ভিডিও করে যা ইতোমধ্যে স্বাধীন সংবাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ভিডিওতে দেখা যায় আটককৃত রাজু নামগুলো একে একে বলছে। এসময় অভিযুক্ত রাজুর বক্তব্য অনুযায়ী নজরুল, মহসিন, কামরুজ্জামান, তুহিন এবং লিয়নের নাম বলতে শোনা যায়। সে বলে এই ব্যক্তিরা তাকে বিষ কিনে দিয়েছে ফারুকের চাষকৃত মাছ মেরে ফেলার জন্য।

এবার আসি পিছনের ঘটনায়ঃ গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) তুলাতুলি আনছার আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দুটি মোবাইল চুরি এবং রামপ্রসাদের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার ভাড়া বাসা থেকে একটি মোবাইল চুরি করে রাজু। তারপর এই চুরির ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের লোকজন তার কাছ থেকে মোবাইলগুলো উদ্ধার করে মালিকদের নিকট বুঝিয়ে দেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে পুলিশের কাছে না দিয়ে গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

এলাকাবাসীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, রাজু ছেলেটি আমাদের গ্রামে বেশি থাকে না, সে বেশি সময় ঢাকা থাকে। এলাকাবাসী জানান, রাজু একজন মাদকাসক্ত ছেলে যার কারণে গ্রামের কোনো মানুষ তাকে দেখতে পারে না। তাকে রামপ্রসাদের চর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চিনে না, তার পরিচয় বের করতে হিমশিম খেতে হয়েছে এই প্রতিবেদককে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হুসাইন মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর থেকে নলচর গ্রামের যুবদল নেতা রবিউল্লাহ রবির গং তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রামপ্রসাদের চর গ্রামের কৃষি জমির পাড় ঘেঁষে অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছিল। এই অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে আমরা গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি এবং সর্বশেষ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করি। এই মানববন্ধনের পর থেকে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়ে যায় এবং রাজনৈতিকভাবে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এর পর থেকে বালুখেকোরা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং এই ঘটনা সেই ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ বলে জানান তিনি। রাজুকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন না বলেও জানান। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যদি এই ঘটনা প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে আমি তা মাথা পেতে নেবো, আর যদি ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে আমার পক্ষে যা যা করার আছে তাই করবো।

এসময় মহসিন বলেন, এই বালুখেকোদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কারণে ২৪’ সালের ডিসেম্বরে নদীতে ডাকাতির ঘটনা দেখিয়ে মেঘনা থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে যেখানে আমিসহ সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদেরও আসামি করা হয়। এই মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল। এবারও যদি ভুল তথ্যে মিথ্যা মামলা করা হয়, এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তিনি।

মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মশিউর বলেন, প্রাথমিক তদন্ত এবং আটককৃত ব্যক্তির জবানবন্দি অনুযায়ী মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তপূর্বক বলা যাবে ঘটনায় কে জড়িত আর কে জড়িত না।

এ বিষয়ে জানতে মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *