সাগর চৌধুরী ভোলা:
১৬ আগস্ট ২০২৫ইং রোজ শনিবার বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবে (জহুর হোসেন চৌধুরী হলে) দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি; বিএনজেপি)-র উদ্যোগে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন বলেন যাদের মরণপণ সংগ্রামের ফলে গত পাঁচ (৫) আগস্ট ২০২৪, সোমবার একটি জুলুমবাজ, দলীয় কায়েমী স্বার্থবাদী ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে ও দলীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশ ত্যাগের মাধ্যমে প্রায় দেড় যুগের কঠিন দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে তাদের যথাযথ সুব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং দেশের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল আগামীর সুসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তার ন্যূনতম মূল্য দেওয়া আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন বলেন সংস্কার দেখিয়ে গত এক বছরে কি সংস্কার করতে পেরেছেন, দেশের কোন খাতে কি সংস্কার হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনাদের কোনো ভূমিকা ছিল না এদেশের ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে, তারপরও আপনাদের স্বাগত জানাই তিনি আরো বলেন, মাননীয় উপদেষ্টা পরিষদকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচারিক সংস্কার ও উন্নতির ক্ষেত্রে আরো সৎসাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁদেরকে শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম হাতে নিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সকল হঠকারিতার অবসান ঘটাতে হবে। দেশ, জাতি, ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি ও সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে অভিজ্ঞ উচ্চশিক্ষিত, মার্জিত রুচিসম্পন্ন সজ্জনদের নিয়ে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। উন্নত জাতির সকল কিছুর মূলেই যে, সুশিক্ষা-সুদীক্ষা ও উন্নত চরিত্রবান হতে হবে।
উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কার্যক্রম প্রসঙ্গে সম্মক ধারণা দেওয়া হয়। তার মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র ও উন্নততর সমাজ প্রতিষ্ঠা অন্যতম। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক অনুশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র ও তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানো হয় এবং তাদের অংশগ্রহণে দেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে ‘চেক এন্ড ব্যালেন্স’ প্রতিষ্ঠার আশা ব্যক্ত করা হয়।
উক্ত সম্মেলনে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণ-জনতার যে নব-উত্থান ও বিপ্লব তাকে স্বাগত জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টির মহাসচিব জনাব এস এম আব্দুল লতিফ। এটি শুধুমাত্র কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীন একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে সাময়িক সফল সংগ্রামই নয়; বরং তা প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও যে কোনো অত্যাচারী ও বৈষম্যসৃষ্টিকারী বলয়ের জন্য এক দীর্ঘস্থায়ী সতর্কবার্তা এবং সংশোধনের তাগিদ, তদুপরি ভবিষ্যৎ সুনেতৃত্বের উত্থানের শুভ ইঙ্গিতও বটে। এ মহা সংগ্রামে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মাগফিরাত কামনা করা হয়, তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়, যথাযথ আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হয় এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করা হয়। সমাজের বিত্তবান ও চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদারভাবে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে যারা সত্যিকার অর্থে মানুষের জান-মালের হেফাযতের জন্য যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন তাদের মাগফিরাত কামনা করা হয় ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়। দেশের অসম সাহসী গর্বিত সেনাবাহিনী সর্বাবস্থায় ভূখণ্ডের স্বাধীনতা রক্ষা ও প্রতিরক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় জাতীয় জনকল্যাণকর কাজও সম্পন্ন করে থাকেন। এবারের চরম সংকটকালীন সময়েও তারা দেশের সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে জননিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের স্থিতিশীলতার জন্য অনবদ্য অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতার সাথে তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এ ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে যে সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্রাংশের নৃশংস আক্রমণ, নিপীড়ন ও গুলি বর্ষণে বহু নারী শিশু ছাত্র যুবক আহত ও নিহত হয় তাদের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা, ধিক্কার ও নিন্দা জানানো হয়। এ জাতীয় ন্যক্কারজনক কর্মের হুকুমদাতা ও উৎসাহদানকারীসহ সকল সংশ্লিষ্টদের আদালতে সমর্পণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। তবে কেউ যেন অকারণ হয়রানি, আতঙ্ক ও নির্যাতনের শিকার না হয় সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জ্ঞাপন করা হয়। একটি সাংবিধানিক দেশে পাইকারী হারে গ্রেফতার ও বিচারবিহীন বেকসুর খালাস কোনটাই কাম্য নয়। ডিবি-সহ গোয়েন্দা বিভাগের সকল শাখার হঠকারী কর্মকর্তা-সহ সকল নিপীড়নকারীদের অপসারণ ও বিচারের দাবি করা হয়।
দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা বিধান করতে হবে এবং তাদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে, কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে তার যথাযথ প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে সংবাদ প্রবাহের স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিধানকে স্বাগত জানানো হয়। সংবাদ প্রবাহ ও সাংবাদিকদেরকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য যে সকল অ্যাক্ট তা দ্রুত সংস্কারের আবেদন জানানো হয়। চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা জান-মাল বাজি রেখে রাতদিন সঙ্গে থেকে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন, দেশে-বিদেশে জনমত কায়েম করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাব সকলের; সেখানে সকল দল ও মতের প্রবেশাধিকার ও বক্তব্য রাখার সম অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
দেশের সর্ব ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ গণমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। গতানুগতিক বাজেট পেশের পরিবর্তে সত্যিকার গবেষণালব্ধ জনকল্যাণকর বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কৃষি উপকরণসমূহের মূল্য কমাতে হবে। আর্থিক খাতের সকল দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথাযথ আমানতদারী, কর্মনিষ্ঠা ও সৎসাহসের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নানা রকম বাড়তি শর্তারোপ করে রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক উন্মুক্ত অধিকারকে সংকুচিত না করার আহ্বান জানানো হয়। কোনো চাপে বা ঠুনকো অভিযোগে কারো নিবন্ধন বাতিল করাও সঙ্গত নয়। অবাধ গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য নিবন্ধনের সকল প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে হবে এবং সারা বছর এ অফিসের দরজা উন্মুক্ত রাখতে হবে। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ফ্যাসিবাদী আইন ২৩টি জেলা ও ১০০টি উপজেলা অফিস, প্রতিটি উপজেলায় ২০০ জন করে দলের সদস্যদের প্রমাণপত্র… ইত্যাদি বিলোপ করতে হবে অথবা কমপক্ষে এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের নির্দেশনা আমলে নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি প্রথম প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৬ সালের ২রা জুন ‘বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি’ নামে। যথাযথ নিবন্ধন লাভের পর তারা হাতঘড়ি মার্কা প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ১০টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য দলের মত তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। অতঃপর ২০২১ সালের ২রা জুন ‘বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি (বিএনজেপি)’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। যথানিয়মে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে পুনঃনিবন্ধন লাভের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে, যার সিরিয়াল নাম্বার ৩৮৮১। তারা ইতোমধ্যে কম ও বেশি ১০০টি আসনের প্রার্থিতা প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত করেছে। স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত তাদের রয়েছে। অনেক জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে যথাযথ রাজনৈতিক কার্যক্রম জারি রেখেছে।
উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টির সভাপতি জনাব মাওলানা মোঃ গোলাম আজম, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উক্ত পার্টির মহাসচিব জনাব এস এম আব্দুল লতিফ। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, প্রফেসর ডা. ফখরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ইউরোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা, শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম মাদানী, মোঃ আব্দুল আহাদ মাদানী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, শামীম আহম্মেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ আহলে হাদীস ছাত্র সমাজ, মোহাম্মদ আব্দুল অদুদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রিন্সিপাল আল-হেরা স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা, আলহাজ্ব মোঃ আলাউদ্দিন সরকার, উপদেষ্টা বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, ইঞ্জি. ইলিয়াস হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, আলহাজ্জ এম এ রায্যাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এএসপি, কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলে হাদীস ছাত্র সমাজ, ড. মুহাম্মদ আহমদুল্লাহ, সভাপতি, এম ফিল ফর ন্যাশনাল ডায়ালগ এন্ড রিসার্চ-সিএনডিআর, এড. মোঃ আইনুল হক, চেয়ারম্যান, সাপাহার সেন্ট্রাল হাসপাতাল, নওগাঁ, এম আই মারুফ পাটোয়ারী, চেয়ারম্যান বিন পাটোয়ারী গ্রুপ, প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যথাক্রমে মুহাম্মদ তৌহিদ বিন তোফাজ্জল হক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল মোমেন, কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি। পরিশেষে সাংবাদিক, অতিথি, সুধী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।