শেখ হাসিনা পৃথিবীর প্রথম নারী স্বৈরাচার: ডা. জেহাদ

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান বলেছেন, শেখ হাসিনা পৃথিবীর প্রথম নারী স্বৈরাচার। “ইতিহাসে আমরা ফেরাউন, নমরুদ, স্ট্যালিনসহ বহু স্বৈরাচারের নাম শুনেছি। কিন্তু একজন নারী হিসেবে শেখ হাসিনা যা করেছেন, ইতিহাসে তার নজির নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিনি নানান আপকর্ম করেছেন। ফ্যাসিবাদকে জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে হটানো খুবই কঠিন, কিন্তু আমরা সেটাই করেছি।”

রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত “জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

জেহাদ খানের বক্তব্য

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যপদপ্রার্থী কর্নেল জেহাদ বলেন, তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাই জানিয়েছেন, সেখানকার মানুষ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে— “তোমরা কীভাবে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটালে?” জেহাদ খানের মতে, এ অর্জন বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরাট বড় সাফল্য, যা ধরে রাখতে হলে জুলাই সনদকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
তিনি বলেন, “অন্যথায় শহিদ আবু সাইদ, মীর মুগ্ধসহ অসংখ্য শহিদদের ত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে। আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকবে। তাই ভবিষ্যতে যাতে কেউ আর স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।”

প্রধান অতিথি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার কারণেই দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের কারণে সেই সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে হলে আইনসভার উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে (Proportional Representation) নির্বাচন চালু করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। যারা দ্রুত নির্বাচন চায় তারা আসলে নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না।”

তার মতে, প্রধান উপদেষ্টা যেমন বলেছিলেন—“আগে সংস্কার ও বিচার, তারপর নির্বাচন”—তেমনি সংস্কার, বিচার এবং জুলাই ঘোষণা-সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন দেওয়া হলে ফ্যাসিবাদ আবার প্রতিষ্ঠিত হবে।

মিয়া গোলাম পরওয়ারের মন্তব্য

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “জুলাই ঘোষণা অসম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দল ও জনগণের দাবি অনুযায়ী এটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। আইনি ভিত্তি না দিলে ভবিষ্যতের সরকার তা মানবে না।” তিনি অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যেই একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা বলেছেন—তারা ক্ষমতায় গেলে জুলাই সনদের সবকিছু বাতিল করে দেবেন।

অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি, ১৯৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা দিয়েছেন তা আশাব্যঞ্জক নয়। তার মতে, নতুন সংবিধান প্রণয়ন ছাড়া ফ্যাসিবাদ ঠেকানো সম্ভব নয়।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নিয়ামুল বশির, গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ফারুক হাসানসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

তারা সবাই জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানান এবং ভবিষ্যতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল ইসলামপন্থী ও গণতান্ত্রিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

ঐক্যের আহ্বান

ডা. তাহের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, “আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করুন, গোলটেবিল বৈঠক করুন। জনগণ কী চায় তা বোঝার চেষ্টা করুন। জুলাই ঘোষণা রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব।”

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতা, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *