মোহাম্মদ হোসেন সুমন:
কক্সবাজার জেলায় জমি রেজিস্ট্রিতে আকাশচুম্বী উৎস কর কমানোর দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে পরিবেশ, জলবায়ু ও নাগরিক সংগঠন ‘সেভ দ্য কক্সবাজার’।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক তৌহিদ বেলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, “জমি নিবন্ধনের নামে কক্সবাজার জেলাবাসীর উপর নতুন করে ‘রক্তচোষা নীতি’ মেনে নেওয়া যায় না। জেলার ২৯ লক্ষ জনগণের উপর এই জুলুম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, “উৎস করের উচ্চহার জমির ক্রেতা-বিক্রেতাকে বৈধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে নিরুৎসাহিত করছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বায়না, পাওয়ার ও হেবা’র মতো বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন। এতে সরকার অতিরিক্ত রাজস্বের পরিবর্তে উল্টো বঞ্চিত হচ্ছে।”
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মকবুল আহমদ বলেন, “অতিরিক্ত উৎস করের কারণে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পেশার লোকজন চরম জীবিকার সংকটে পড়েছে। জেলায় এই বৈষম্যের ফলে বৈধভাবে জমি নিবন্ধন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
প্রধান বক্তার আলোচনায় সিভিল সোসাইটি-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)’র সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “নতুন উৎস কর নীতিমালার ফলে প্রতি শতক কৃষি জমিতে ২৫ হাজার টাকা, আবাসিক জমিতে ৫০ হাজার টাকা ও বাণিজ্যিক জমিতে ১ লাখ টাকা অতিরিক্ত উৎস কর দিতে হবে। গত ১ জুলাই থেকে কক্সবাজার জেলার ১৮৮ মৌজার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৮১ মৌজার জন্য এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা কক্সবাজারবাসীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ।”
আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে রাজনীতিবিদ মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন হাবিব বলেন, “নতুন করে আরোপিত উৎস কর নীতিমালা বৈধ লেনদেন নিরুৎসাহিত করছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।”
কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, “উৎস করের হার জমির বাস্তব বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। করের হার যৌক্তিক করলে জনগণ দলিল রেজিস্ট্রিতে আগ্রহী হবে ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।”
সাবেক ছাত্রনেতা ও নাগরিক সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন বলেন, “নতুন করে করারোপের আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, দলিল লেখক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ প্রক্রিয়া চালু করা জরুরি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়া এই ‘রক্তশোষণনীতি’ কক্সবাজারবাসী কোনোভাবেই মানবে না।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপা’র কক্সবাজার সদর উপজেলা সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী বলেন, “সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত উৎস করের এই জুলুম মেনে নেওয়া যায় না।”
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরামের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাহাদুর, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান, সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক কবি এম. জসিম উদ্দিন, পরিবেশ ও উন্নয়নকর্মী মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সংগঠক মাওলানা হাফেজ ওমর ফারুক, হেলপ ইয়ুথ ক্লাবের সভাপতি আবদুর রহিম বাবু, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী রতন দাশ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ, দলিল লেখক সমিতির সদর উপজেলা সভাপতি মমতাজ আহমদ, সমাজকর্মী আবুল কাসেম, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী জাফর আলম, মানবাধিকারকর্মী জামাল হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা শেষে সেভ দ্য কক্সবাজার’র একটি প্রতিনিধি দল ভারপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন।