হাইব্রিড ও সুবিধাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ বিএনপির

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

বিএনপিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদী হাইব্রিড নেতাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে, আন্দোলন-সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাদের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ন্যূনতম মূল্যায়ন থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অসন্তোষ ছড়াচ্ছে।

দুঃসময়ে মামলা-হামলার ভয়ে যারা গুটিয়ে ছিলেন, তারা এখন নানা কর্মসূচিতে সক্রিয়। হাইব্রিড নেতারা সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে এবং প্রশাসনিক দপ্তরেও নিজেদের দাপুটে ‘হর্তাকর্তা’ হিসেবে প্রকাশ করছেন। এই কর্মকাণ্ডের দায় পুরো দলের ওপর পড়ছে, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের ভাবমূর্তিতে।

এদিকে, বিদেশে অবস্থান করা অনেক নেতা ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। নিজেদের ‘নির্যাতিত’ নেতা হিসেবে জাহির করার সঙ্গে সঙ্গে মনোনয়ন পাওয়ার লবিংও শুরু করেছেন।

দলীয় হাইব্রিড নেতাদের কার্যক্রমে অভিযোগ জমেছে। বিএনপি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে অভিযোগ পেলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন, তবে প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় সুবিধাবাদীরা লবিং-তদবির ও অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিএনপি উজ্জীবিত। সারা দেশে দলীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন স্থান নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আন্দোলনের ত্যাগী নেতারা ব্যস্ত, আবার সুবিধাবাদীরা স্থান দখল করছে। একদিকে যারা সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, তারা তৃণমূলের ত্যাগীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে থাকা, মামলা-হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত, পঙ্গুত্ববরণ করা ও ঘরছাড়া নেতারা এখন কার্যত ‘অসহায়’। খোঁজে দেখা গেছে, বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী নেতারা মিছিল-মিটিংয়ের সামনের সারিতে থাকছেন এবং বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন কমিটিতে তারা সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুযোগ করে দিচ্ছেন।

গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিতে এমন অভিযোগ উঠে। কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্য দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের সেখানে স্থান দেওয়া হয়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টারা বলেন, সুবিধাবাদী ও হাইব্রিড নেতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সংগঠন থেকে বারবার সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। যেসব নেতারা দলের দুর্দিনে বিদেশে গিয়েছিলেন, তারা এখন দেশে ফিরে পদ-পদবি বাগিয়ে নিতে তৎপর। আর যারা দীর্ঘ আন্দোলনে সখ্য ও ত্যাগ দেখিয়েছেন, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, সুবিধাবাদীরা দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। ত্যাগী ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাদের লিখিত অভিযোগও কেন্দ্রে জমা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, তা দলের নজরে রয়েছে এবং মূল্যায়নে প্রতিফলিত হবে।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত অভিযোগ, গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *