স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের উমেদার আব্দুস সোবহান ও বাবুর নাম বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কাগজে-কলমে তিনি ছিলেন একজন সাধারণ উমেদার, দৈনিক ৬০ টাকা হাজিরাভিত্তিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। কিন্তু বাস্তবে সেই ‘তুচ্ছ’ পদকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতি ও অনিয়মের এমন এক সাম্রাজ্য, যার ফলে তিনি আজ শতকোটি টাকার মালিক।
চাকরি ও অঢেল সম্পদের অস্বাভাবিক সমীকরণ
আব্দুস সোবহান ২০১৪ সালে মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অস্থায়ী উমেদার হিসেবে যোগ দেন। ১০ বছরের মধ্যে তিনি ও তাঁর পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড় জমা করেছেন। দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে নিযুক্ত একজন কর্মীর পক্ষে এমন সম্পদের মালিক হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব, কিন্তু সোবহান সেই অসম্ভবকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, অফিসের ঘুষ ও তদবির-বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি এই বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও তাঁর কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেন।
কর নথিতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ
সোবহান, তাঁর স্ত্রী হালিমা এবং মায়ের আয়কর নথিতে বিপুল সম্পদের উল্লেখ রয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ১৫ কোটির বেশি। অথচ স্ত্রী ও মা দুজনেই গৃহিণী।
কাগজপত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী:
-
রাজধানীর আদাবরের সড়কের পাশে ২৪/৩ হোল্ডিং নম্বরে একটি সাততলা বাড়ির মালিক সোবহান।
-
আদাবরের ১০ নম্বর সড়কে ৭১২/১৯/৬৬ হোল্ডিংয়ে ৩.৫৯ কাঠা জমিতে ২৪টি ছাপরাঘর।
-
মোহাম্মদপুর সড়কের ১৭/বি, বি/এফ-এ ৫ শতাংশ জমিতে ১৮টি ছাপরাঘর (আরএস নং ২৪০, এসএ খতিয়ান নং ৫৯)।
-
বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্বে ২ কাঠার একটি প্লট (সিএস খতিয়ান নং ২৯) এবং একই এলাকায় আরও ৬ শতাংশ জমি (এসএ নং ২৯৩)।
-
আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১১ নম্বর সড়কে ৬১৭ হোল্ডিংয়ের একটি ভবনে তাঁর তিনটি ফ্ল্যাট।
-
বছিলা সিটিতে ১৫ কাঠার একটি প্লট।
-
মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় ২০ কাঠা জমি।
-
কাঁটাসুর মৌজায় ৯৬৫৪ নং দলিলমূলে ১৮ কাঠার একটি প্লট।
-
আদাবরের ৩ নম্বর সড়কের ৩২২ হোল্ডিংয়ের “সিলিকন” ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট, যেখানে বর্তমানে তাঁর এক আত্মীয় থাকেন।
গাড়ি ও বিলাসী জীবনযাপন
সম্পদ শুধু জমি বা ফ্ল্যাটেই সীমাবদ্ধ নয়। সোবহানের নামে তিনটি মাইক্রোবাস রয়েছে। অন্যদিকে, তাঁর স্ত্রী ও মা গৃহিণী হলেও কর নথিতে বিপুল সম্পদের মালিক হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। এছাড়া শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়দের নামেও সম্পদ কেনা-বেচার অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ
মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভেতরে সোবহানের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে অভিযোগ উঠেছে তিনি এই পদকে ‘আলাদিনের চেরাগে’ পরিণত করেছেন। একাধিক তদন্তেও তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও তদবির-বাণিজ্যের প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গেছে।
যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ
এসব অভিযোগ ও সম্পদ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আব্দুস সোবহানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উমেদার বাবুর বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ, তার সম্পদের পাহাড়সহ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত ও অনুসন্ধানাধীন।