স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) সংসদীয় আসন থেকে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে যুক্ত করার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ‘অখন্ড বিজয়নগর উপজেলা রাখার দাবীতে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি জনবিরোধী ও অযৌক্তিক। স্থানীয়রা ইতিমধ্যেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
গত ২৫ আগস্ট, কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোঃ ইমাম হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৩০ মে নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে চান্দুরা, বুধন্তি ও হরষপুর ইউনিয়নগুলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে কমিটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালাচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশন আয়োজিত গণশুনানিতে কমিটির পক্ষে আবেদনকারীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন। অপরদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে ইউনিয়নগুলো যুক্ত করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি দাবি করেন, চান্দুরা, বুধন্তি ও হরষপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জমির খাজনা, জমা-খারিজসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের জন্য সরাইল উপজেলায় যাতায়াত সুবিধাজনক। তিনি আরও বলেন, বিজয়নগর উপজেলা সদরে পৌঁছাতে দুই ঘণ্টার পথ, যেখানে সরাইল সদরে যেতে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।
সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি এই যুক্তিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ হিসেবে অভিহিত করেছে। আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন বলেন, “চান্দুরা, বুধন্তি ও হরষপুর ইউনিয়ন থেকে বিজয়নগর উপজেলা সদরে পৌঁছাতে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। বিজয়নগরের ভৌগোলিক, প্রশাসনিক ও জনবিন্যাসগত স্বার্থ উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের প্রতি অমানবিক অবিচার।”
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণশুনানিতে ব্যারিস্টার ফারহানার বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাইরে তার ‘ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গুন্ডাবাহিনী’ কমিটির নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এনামুল ইসলামসহ সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালায়। এই বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কমিটি। শুনানিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতির ঘটনা সংঘটিত হয়, যা একপর্যায়ে নির্বাচন ভবনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।
কমিটি জানিয়েছে, বিজয়নগরবাসীর স্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হবে।”
উল্লেখ্য, আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের দাবি, প্রায় দুই লক্ষাধিক ভোটার নিয়ে বিজয়নগর একটি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনের দাবি রাখলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে বিভিন্ন আসনের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলিত করা হয়েছে।