স্টাফ রিপোর্টার:
নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটসি)-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহানাজ পারভীনের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী ও সাবেক প্রশিক্ষকরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাত থেকে তিনি নিয়মবিরোধীভাবে অর্থ হাতিয়েছেন এবং নিজের পরিচিতি ও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে চাকরির পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে নাগরপুর টিটসিতে প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সেই বছরের শেষের দিকে শাহানাজ পারভীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি সিলেট ও টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।
চাকরিচ্যুত ও অযোগ্য নিয়োগের অভিযোগ
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে অটোমেকানিক ট্রেডের তিনজন দক্ষ প্রশিক্ষক—নাসির উদ্দীন, আহসান হাবীব এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেডের আকিমুন্নাহার চাকরি হারান। তাদের স্থলে নিয়োগ পেয়েছেন কম চাহিদাসম্পন্ন সরকারি গার্মেন্টস ট্রেডের প্রশিক্ষক শামীম আল মামুন। সাবেক প্রশিক্ষকদের মতে, এই নিয়োগ শাহানাজ পারভীন ও শামীম আল মামুনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে হয়েছে এবং এটি সরকারি নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি গ্রহণ ও অর্থ আত্মসাৎ
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদনের ফি ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কখনও কখনও আবেদনকারীদের জামানত হিসেবে হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। মোট ৬২৫ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিটি ব্যাচের ইন্ডাস্ট্রি ভিজিটের জন্য ৭ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে। তবে অভিযোগ অনুযায়ী, এই অর্থ কখনও শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে ব্যয় করা হয়নি। মোটর ড্রাইভিং ট্রেডের জন্য প্রতিদিন ২০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষার্থীরা বাস্তবে ১০ লিটারের বেশি পায়নি। এছাড়া দুপুরের খাবারের জন্য বরাদ্দ ৩৫০ টাকা হলেও শিক্ষার্থীরা মাত্র ২০–২৫ টাকার খাবার পান।
নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম
শাহানাজ পারভীন reportedly এককভাবে ক্রয়, ব্যয় ও বরাদ্দ নিয়ন্ত্রণ করেন। কমিটির সদস্যদের জোর করে স্বাক্ষর নেন এবং প্রকৃত ক্রয় সম্পন্ন করেন না। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাদা বিলভাউচারে স্বাক্ষর নিয়ে সামান্য জিনিস ভাঙ্গারীর দোকান থেকে সংগ্রহ করতেন। এই অনিয়মের মাধ্যমে তিনি ঢাকার অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সালনা বাজারের আগে দুটি জায়গা কিনে সেখানে একটি দোতলা ও একটি সেমি-পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মানের অবনতি
শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, তাদেরকে কোনও প্রশিক্ষণ সামগ্রী যেমন টি-শার্ট, এপ্রন, সুরক্ষা জুতো, ব্যাগ, হাতমোজা বা চশমা দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে সামগ্রী ছিল তা ফেরত নেওয়া হয়। বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মাত্র একটি ছোট কেক ও ১৫–২০ টাকার একটি সফট ড্রিঙ্ক পান। ড্রাইভিং ট্রেডের শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও সীমিত ছিল।
সাবেক প্রশিক্ষকরা জানান, প্রতি মাসে বেতনের অর্ধেক বিকাশে জমা দিতে হতো। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারলে চাকরি হারাতেন। একজন সাবেক ক্রয় কমিটির সদস্য জানান, শাহানাজ পারভীন ক্রয় প্রক্রিয়ায় জোর করে স্বাক্ষর নিতেন এবং প্রকৃত ক্রয় সম্পন্ন করতেন না।
অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধায়ক ও প্রশাসনের অবস্থান
শাহানাজ পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি এবং ফোনে সংযোগ বারবার কেটে দিচ্ছিলেন।
ডিরেক্টর সালাউদ্দিন জানান, এই অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ড্রাইভার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরেজমিনে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা অপরিহার্য।
জনসাধারণের আশা
স্থানীয়রা আশা করছেন, বর্তমান প্রশাসন নাগরপুর টিটসিকে প্রকৃত প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে পুনর্গঠন করবে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করবে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।