স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, বরং প্রতিনিয়ত তা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তিনি অভিযোগ করেন, অশুভ ও অদৃশ্য শক্তির তৎপরতা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে এবং কিছু রাজনৈতিক দল নানা শর্ত আরোপের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ বক্তব্য দেন।
গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্বের ওপর জোর
তারেক রহমান বলেন, ‘‘পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বেশি জরুরি। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, এ ব্যাপারে বিএনপি সম্পূর্ণ একমত। তবে জনগণের অধিকার চর্চা ও প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে কোনো সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই করা যাবে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র আজও নিরাপদ নয়। কারণ জনগণের ভোটাধিকার এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের রাজনীতি থেকে অনিশ্চয়তা কখনোই দূর হবে না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘‘এই সরকার জনগণের ম্যান্ডেটের সরকার নয়। এটি মূলত জনগণের অভিপ্রায়ের একটি অস্থায়ী রূপ। তবে এই সরকারের কাছে দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সরকারের মতো পারফরম্যান্স আশা করার যৌক্তিক কারণ নেই। এইজন্য যতদিন এরা ক্ষমতায় থাকবে, তাদের দুর্বলতা তত বেশি প্রকট হয়ে উঠবে।’’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য জনগণ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে। আজকের অন্তর্বর্তী সরকার সেই সংগ্রামের একটি ধাপ মাত্র, এটি কোনো সমাধান নয়।’’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘বিএনপি মনে করে রাজনীতি মানে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয়। বরং জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই রাজনীতির আসল উদ্দেশ্য।’’
তিনি জানান, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পেপারওয়ার্কের চূড়ান্ত পর্যায় চলছে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সতর্কবার্তা
তারেক রহমান নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানারকম ষড়যন্ত্র ইতোমধ্যেই ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। অশুভ শক্তি নানাভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার যেকোনো অপচেষ্টা বিএনপি প্রতিহত করবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি অতীতে কখনো পিছপা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। দেশের প্রতিটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলবে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারেক রহমানের এই বক্তব্য দলটির ভবিষ্যৎ কৌশলের একটি ইঙ্গিত বহন করে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে নির্বাচন, সংস্কার ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে, সেখানে তারেক রহমানের এই বক্তব্যকে তারা একটি ‘পলিসি স্টেটমেন্ট’ হিসেবে দেখছেন।
তিনি শুধু নির্বাচনী ইস্যুতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং গণতান্ত্রিক চর্চা, জনগণের অধিকার এবং জবাবদিহিমূলক সরকারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন।