স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বারবার ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপি প্রতিবারই ফিনিক্স পাখির মতো নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) মাজারে দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ধ্বংসে ষড়যন্ত্র ও সংগ্রাম
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে, বারবার লড়াই করেছে। বিএনপিকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বিএনপি প্রতিবারই নতুন করে উঠে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিকে দমাতে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। “তারপরও বিএনপি সংগ্রাম চালিয়ে গেছে, পিছপা হয়নি,” যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে থেকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে জনগণের আন্দোলন এবং ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, সামনে যে বড় চ্যালেঞ্জ তা হলো আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারিত নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন। “দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন ফখরুল।
বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব ও ৩১ দফা কর্মসূচি
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি সংস্কার কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। কমিশনের আনা প্রস্তাবসমূহ সমাধানে দলটি আন্তরিকভাবে কাজ করেছে।
তিনি ইঙ্গিত দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, “৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে পরিবর্তনের ভিত্তি রচনা করেছি। জনগণের সমর্থনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।”
শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার অবদান
বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশের রাজনীতিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শহীদ জিয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করেছিলেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই তৈরি পোশাক শিল্পের প্রসার ঘটে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ উন্মুক্ত হয়।”
এছাড়া তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তাঁর হাত ধরেই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি
এদিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, মহানগর বিএনপির উত্তর আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।