বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির তৎপরতা বাড়ছে

কক্সবাজার সংবাদদাতা: 

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের অংশ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। বাংলাদেশে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-কে আগের চেয়ে অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ

আক্রান্ত এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, আরাকান আর্মি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, জেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, রোহিঙ্গা পাচারসহ অর্থ সংগ্রহের নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নাফ নদী এবং স্থল সীমান্তের পুরো এলাকায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড টহল ও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। জেলেদের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

জেলেদের অপহরণ

গত মাসে নাফ নদী থেকে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা বেড়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের নাইখংদিয়া থেকে ২৬ আগস্ট ১১ জন বাংলাদেশি জেলে দুইটি ট্রলারসহ আরাকান আর্মির হাতে আটক হন। ২০-২৬ আগস্টের মধ্যে ৫১ জন জেলে আটক হয়েছিল।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মোট ২৬৭ জন বাংলাদেশি জেলে আটক হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।

অস্ত্র ও মানবপাচারের অভিযোগ

সীমান্তের খরের দ্বীপ এলাকায় বিজিবির অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় জি-৩, এমএ-১, এলএম-১৬ রাইফেলসহ ৫০৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে এক তরুণ এক-৪৭ রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করেছে। বিজিবি আশঙ্কা করছে, এসব অস্ত্র মাদক চোরাচালান বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।

সীমান্তে সতর্কতা বাড়ানো

কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার জানান, সীমান্তে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। সীমান্তে ফোর্স বৃদ্ধি ও নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধে কঠোর নজরদারি চলছে।

আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি

বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার। সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ-রাখাইন সীমান্তে মাদক পাচারও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে বিজিবি ১,৩২১ কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছে। ইয়াবা, আইস ও অস্ত্র-গোলাবারুদের প্রবেশ সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে হচ্ছে।

সামরিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক জানান, মিয়ানমারের নির্বাচনকে সামনে রেখে সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আরাকান আর্মি অর্থ ও অস্ত্র সংকটে পড়ে বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সরবরাহ ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ সরকার সীমান্তে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *