আলমাস হোসাইন:
ঢাকার আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে একাধিক ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জলিল উদ্দীন ভূঁইয়া ওরফে রাজন ভূঁইয়াকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪ এর একটি আভিযানিক দল। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আশুলিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রাজন ভূঁইয়া ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার এবং ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
র্যাবের অভিযান ও গ্রেপ্তারের ঘটনা
র্যাব জানায়, সোমবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর আসে যে, একাধিক হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা রাজন ভূঁইয়া আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অবস্থান করছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর সিপিসি-২ এর একটি বিশেষ দল সেখানে অভিযান চালায়। দুপুরের দিকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব সদস্যরা।
পরে নিয়ম অনুযায়ী রাজন ভূঁইয়াকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
রাজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে জানা গেছে, রাজন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হত্যা মামলা ছাড়াও রয়েছে নাশকতা ও চাঁদাবাজির মামলা। এর মধ্যে প্রায় ৪-৫টি মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
বিশেষ করে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনা ও লাশ পোড়ানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর অন্যতম আসামি হিসেবে তার নাম উল্লেখ রয়েছে।
র্যাবের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য
র্যাব-৪ সিপিসি-২ এর স্কোয়াড্রন লিডার মো. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন—
“রাজন ভূঁইয়া একাধিক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। লাশ পোড়ানোসহ ভয়াবহ কিছু মামলারও আসামি তিনি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
জনমতের প্রতিক্রিয়া
রাজন ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের খবরে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। তবে রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন এবং আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেঁচে যেতেন।
একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন—
“ওকে দেখে মানুষ ভয় পেত। গ্রামে অনেক দখলবাজি করেছে। এবার ধরা পড়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি।”
অন্যদিকে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী মনে করছেন, তার গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে হয়তো আবার বেরিয়ে আসবেন। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
রিপোর্টার নোট
রাজন ভূঁইয়ার মতো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার দীর্ঘ তালিকা নতুন কিছু নয়। আশুলিয়া অঞ্চলে এর আগে একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তবুও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে এসব আসামিরা আইনের নাগালের বাইরে থেকে যান। এবার র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্থানীয় জনমনে আশার সঞ্চার হলেও, মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়া সময়ই বলে দেবে—এবার তিনি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসবেন নাকি শাস্তি ভোগ করবেন।