স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শুধু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতিই নয়, বরং যেসব রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে আঁকড়ে ধরে টিকে আছে কিংবা তাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদেরও জনগণের আদালতে এবং আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। জনগণ সেই বিচার প্রত্যাশা করে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি অডিটোরিয়ামে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় পার্টির সমালোচনা
রিজভী বক্তব্যে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভারত সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন—‘ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারব না।’ এটি কি কোনো স্বাধীন দেশের একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের বক্তব্য হতে পারে? আপনারা কি ভারতের রাজনৈতিক দল, নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? আপনাদের কি নিজস্ব নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই?”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে, কারা ১৬ বছর জনগণের লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে। কারা এই দেশকে আওয়ামী ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালন করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনারা একটা কুলিং টাইম চান। ২০০৮-২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা দুই বছরের একটা কুলিং টাইম দিয়েছেন। তারপরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চারে বিশ্বাস করে না। কুলিং টাইম আবার কিসের। আর টর্চার-ই বা কিসের। বিএনপি তো ক্ষমতায় নেই। এখন তো নির্বাচনই হয়নি। বিএনপি কখনো, কোনো অবস্থাতেই বেআইনিভাবে কোনো নির্যাতন, অত্যাচারে বিশ্বাসী নয়।’
তিনি পরিষ্কারভাবে জানান, বিএনপি কোনোভাবেই ‘মব কালচার’-এ বিশ্বাস করে না। কে রাজনীতি করবে আর কে করবে না, সেটা আইনের ব্যাপার। বিএনপি গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রাজনীতিতেই বিশ্বাসী। কিন্তু অতীতের রাজনৈতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী একনায়কতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে জাতীয় পার্টি বারবার ভূমিকা রেখেছে।
ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদেরও দায়ী করেন
রিজভী বলেন, “১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জনগণের লক্ষ-কোটি টাকা পাচার করেছে। ক্ষমতার জোরে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রশ্ন হলো, কারা সেই ফ্যাসিবাদকে রক্ষা করেছে, কারা তার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে? তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতীয় পার্টি। জনগণের দাবি—যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছে, তারাও যেন বিচারের মুখোমুখি হয়।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে উদ্দেশ করে
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর এক বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির দায় এখন বিএনপিকে নিতে হবে। কিন্তু বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনও দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাহলে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছেন কেন?”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যখন নুরুল হক নুরের ওপর অফিসে সশস্ত্র হামলা হলো, তখন সেই লাল শার্ট পরা হামলাকারী আসলে কে ছিল? যখন ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু গুম হলেন, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল? যখন অসংখ্য ছাত্র-যুব নেতাকে গুম করা হলো, তখন আপনারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন?”
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে
২০১৪ সালের নির্বাচনকে ‘নির্বাচনবিহীন নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, “সেই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার ছিল না, সেখানে কুকুর-বিড়াল আর ছাগল-গরু ঘুরে বেড়াচ্ছিল। অথচ জাতীয় পার্টি তখন বলেছিল যাবে না, পরে আবার গেল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী ছিল?”
গণমাধ্যম প্রসঙ্গ
বিএনপির এই নেতা গণমাধ্যম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, অনেক গণমাধ্যম আজও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ‘শহীদ’ না লিখে ‘প্রয়াত’ শব্দ ব্যবহার করছে। অথচ তিনিই বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আজ কি কোনো গণমাধ্যম শেখ হাসিনার আমলে বঙ্গবন্ধুর বাইরে অন্য কারো নাম বড় করে বলতে পারে? যদি বলতো, তাহলে কি তাদের টিকে থাকতে দেওয়া হতো?”
উপসংহার
বিএনপির নেতা বলেন, “আমরা সবাই ভুক্তভোগী। আমাদের সবার নামে অন্তত ৫০০ করে মামলা দেওয়া আছে। তবু আমরা চাই না, অন্য কারও সঙ্গে অন্যায় হোক। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, তাদের বিচার জনগণ দেখতে চায়।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।