কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
জমি কেনার বায়না টাকা ফেরত নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কুটচালে বিপাকে পরেছেন কুয়াকাটা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নেছার উদ্দিন হাওলাদার। স্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট থেকে জোরপূর্বক ৩০ লক্ষ টাকার চেক হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ভাইরাল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন তার প্রতিপক্ষরা। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে মুসুল্লিয়াবাদ গ্রামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করেন অভিযোগকারীর পিতা মোস্তফা আকন।
গত রবিবার (৩১ আগস্ট) কুয়াকাটা পৌর ছাত্রদল নেতা নেছার উদ্দিন হাওলাদার এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৩০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক জোরপূর্বক হাতিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করেন একটি পক্ষ। কিন্তু প্রেরিত ছবিতে কিছু অসঙ্গতি এবং ভিডিও ক্লিপে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামীর কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি অভিযোগকারী হালিম আকনকে চেকটি উদ্ধার করতে চাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ পাওয়ার পর হালিম আকনের বক্তব্য না পেয়ে অনেক সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেননি। তবে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামী বলেন, ‘ভিডিও ধারণ করার সময় আমি পাশে থেকে হালিমের অভিযোগ শুনছিলাম। আমি কাউকে ভিডিও সরবরাহ করিনি। কে বা কারা ভিডিও ও ছবি সরবরাহ করেছেন তা আমার জানা নেই।’
নেছার উদ্দিন জানান, তিনি ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেএল ৩৪নং লতাচাপলী মৌজার এসএ ২১০৬ নং খতিয়ানের ৩৬৫৫ নং দাগ এবং বিএস ৪৩৯ নং খতিয়ানের ৪১০৬ নং দাগের অংশ থেকে ০.১৫ একর জমি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। এরপর বিভিন্ন তারিখে ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে একশত টাকা মূল্যমানের তিনখানা ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি বায়না চুক্তিপত্র দলিল সম্পাদন করা হয়। পরবর্তীতে ওই জমি বেশি মূল্যে দাতা মোস্তফা আকন অন্যত্র বিক্রয় করেন।
বিষয়টি নেছার উদ্দিন জানতে চাইলে তাকে নগদ ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন এবং মোস্তফা আকনের পুত্র আব্দুল হালিম আকনের নামে একটি ব্যাংক চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে জমি বিক্রয়ের টাকা নিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে হালিম আকন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে একটি আবেদন জমা দেন, যাতে ছাত্রদল নেতা টাকা উত্তোলন করতে না পারেন। ব্যাংকে আবেদন করার বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রদল নেতার প্রতিপক্ষরা হালিম আকনকে ব্যবহার করে একটি ভিডিও ক্লিপ ধারণ করে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে সরবরাহ করেন। ছাত্রদল নেতা বিষয়টি টের পেয়ে মোস্তফা আকনকে জানালে তিনি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে ২৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে দেন এবং হালিম আকনের চেকটি ফেরত নেন। এখনো নেছার উদ্দিন ৩ লাখ টাকা পাওনা আছেন।
এ বক্তব্য সাংবাদিকদের দেওয়ার সময় মোস্তফা আকন পাশে বসা ছিলেন। ছাত্রদল নেতার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘নেছার উদ্দিন আমাদের কাছে জমির টাকা পাবে, তার প্রেক্ষিতে চেক দেওয়া হয়েছে, জোরপূর্বক নেওয়া হয়নি। আমার ছেলে হালিমকে কেউ ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করেছেন। নেছারের সঙ্গে আমাদের দেনা-পাওনার বিষয় সমাধান হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের পরিবারের কোন অভিযোগ নেই।’
নেছার উদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ‘এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল হালিম আকনকে জোরপূর্বক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা স্টেটমেন্ট নিয়ে সেগুলো বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছে। এমনকি আমার নামে কয়েকটি পত্রিকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং পরিকল্পিত। এতে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন।’
তবে এ বিষয়ে আব্দুল হালিম আকনের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন গত কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নেছার উদ্দিনের সঙ্গে মোস্তফা আকনের জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন ছিল। আমার জানামতে ইতোমধ্যে তা সমাধান হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিলো তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোন অন্যায় করলে মূল দলের নেতারা তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন। এ নিয়ে অপরাজনীতির কোন সুযোগ নেই।