নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শামীম ও ফারুক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন দুর্নীতি ও ঘুষখোরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অফিসে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহে গেলে তাদেরকেও অফিস প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি এই পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করেছে। এর পর থেকেই কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। দুর্নীতিতে জড়িত অনেকেই নিজেদের কার্যক্রম গোপন রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সেই আতঙ্ক থেকেই সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। আগামী পরশু জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

সাংবাদিকদের গেটে আটকে দেওয়া: সম্প্রতি অফিসিয়াল এসাইনমেন্ট নিয়ে দুইজন বিশেষ প্রতিনিধি পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ করতে গেলে গেটে আটকে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ ও উপ-সহকারী ফারুকের নির্দেশে গেটের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এমনকি সেখানে উপস্থিত দালাল চক্র সাংবাদিকদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশে সংবাদকর্মীদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে যুগের ভাবনাযুগের ভাবনা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শাহিন আলম, গাজী টিভি ও নারায়ণগঞ্জ বার্তার সাংবাদিকসহ একাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বরং তাদের অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণে স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

“সংষোধন: ভুল নাম ‘বসত যুগের চিন্তা’ দেওয়া হয়েছিল, সঠিক হবে ‘যুগের ভাবনা’।”

অভিযান হলেও দুর্নীতি কমেনি: নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রশাসন এর আগে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অর্ধ-ডজন দালালকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, এখনো ঘুষ ছাড়া কোনো ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে প্রতিটি কাজে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।

শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: সেবাগ্রহীতা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি বেড়েছে, আর সেবার মান কমেছে। তার যোগদানের আগে অনেকে ভেবেছিলেন পাসপোর্ট অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরে আসবে। কিন্তু উল্টো সেখানে বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। শুধু তাই নয়, শামীম আহমেদের অতীত নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, তিনি ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে।

ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ: সেবাগ্রহীতা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, উপ-সহকারী পরিচালক ফারুক নানাভাবে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কিছু অসাধু সাংবাদিককে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তাদেরকে প্রতি মাসে বেশ মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে থাকেন এই ফারুক, যাতে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে না পারে। জানা যায়, ফারুক ও শামীম একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক সিন্ডিকেট।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে নীরবতা: এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএস পাঠানোর পরও কোনো উত্তর দেননি। উপ-সহকারী পরিচালক ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিদের নানা ভাবে অপদস্ত করে এবং বিভিন্ন অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে গালিগালাজ করেন। এবং হত্যার হুমকি দেন এই বলে যে, আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হলে কাউকেই ছাড়বেন না।

একইভাবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

সেবাগ্রহীতাদের হতাশা: পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ জানান, প্রতিটি ধাপে তাদের ঘুষ দিতে হচ্ছে। দালাল ছাড়া অফিসে কোনো কাজই এগোয় না। অথচ সরকার পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। স্থানীয় এক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে কোনো সেবা টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। আমরা সরকারের কাছে সেবা নিতে আসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দালাল আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি হয়ে যাই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *