সুপ্রিম কোর্টের হাতে যাবে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব: হাইকোর্টের রায়

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব এখন থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। এছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী ও চতুর্থ সংশোধনীর বিধান বাতিল করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, হাইকোর্ট আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি আলাদা সচিবালয় গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন, যা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও কার্যকর করবে।

সংবিধান সংক্রান্ত মামলা ও রায়ের পটভূমি

এর আগে সকালেই হাইকোর্টে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে রুলের রায় ঘোষণা শুরু হয়। ১৩ আগস্ট এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, এবং ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম

মূল রিটটি দায়ের করা হয়েছিল ২৫ আগস্ট ২০২৪ সালে। এতে ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান– বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০ এপ্রিল বেঞ্চ গঠন করেন। এর আগে মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ছিল, তবে ২৪ মার্চ তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সেই বেঞ্চ ভেঙে যায়।

সংবিধানের মূল ও সংশোধিত প্রাসঙ্গিক বিধান

  • ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান: বিচারকর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তি ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত।

  • সংশোধিত সংবিধান (বর্তমান): অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি ইত্যাদি) এবং শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধিতে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুতর প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত।

এই রায় কার্যকর হওয়ার পর দেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *