গ্রেফতারের পর আওয়ামী দোসর মারুফ আহমেদের ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যুতা ও প্রতারণার কাহিনী প্রকাশ

বাদল খান:

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সক্রিয় সদস্য ও যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ শাহ (৩৭)-কে গ্রেফতারের পর তার দীর্ঘদিনের লুকানো কুকর্ম ও অপরাধ সাম্রাজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের একটি অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী মামলার পলাতক আসামি ছিলেন।

ডিএমপি’র যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা নং-৬০, তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫-এ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৮/৯/১০/১২ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারের পর মারুফ ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যুতা ও প্রতারণার কাহিনী একে একে প্রকাশ পাচ্ছে।

মারুফের দুই ভাই, শরিফ আহমেদ ও আরিফ আহমেদ, ঢাকা সাউথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মো. বশির আহমেদ (সানি) ও দৈনিক রূপবানী পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ বাদলকে দোষারোপ করে বারবার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। গোয়েন্দা সূত্রও এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২০১৮ সালে সায়দাবাদ ট্রেড সেন্টার ভবন নির্মাণের জন্য জমির মালিকদের সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করে মারুফ। কিন্তু ২০২৩ সালে মেয়াদ শেষে হলেও প্রাপ্য অংশ মালিকদের না দিয়ে উল্টো হুমকি দেয়। এ নিয়ে থানায় একাধিক জিডি (নং-১১৪৯, তারিখ-১৪/২/২০২৪ এবং নং-১৮০২, তারিখ-২৫/১২/২০২৪) হয়। পরবর্তীতে আদালতে আরবিট্রেশন মিস কেস নং ৪৯৬/২০২৪ দায়ের হয় এবং আদালত তার বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রতারণার মাধ্যমে ফ্ল্যাট বিক্রি ও হস্তান্তরের কাজ চালিয়ে যায়।

মারুফের ‘মারুফ প্রপার্টিজ লিঃ’ নামের কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, ভুয়া প্রজেক্ট চালু ও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়ে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে—

বিবির বাগিচা, ডলফিন গলি (মারুফ গার্ডেন): তিনটি মামলা চলমান। ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে মালিককে ভয়ভীতি প্রদর্শন।

শহীদ জিয়া স্কুল গলি: জমির মালিককে সাইন ইন মানি না দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফাঁকি।

মুগদা: প্রবাসীর জমি দখলের চেষ্টা। রাজউক প্ল্যান না মানায় মামলা।

কালভার্ট রোড, খিলগাঁও: কাশেম সাহেবের জমি দখলের চুক্তি।

মিরপুর-রূপনগর, প্লট-১: জমি দখল ও প্রতারণার অভিযোগ।

রূপনগর আবাসিক রোড-৪, প্লট-২৩: “মারুফ গার্ডেন” নামে ভুয়া প্রজেক্ট প্রচার।

ধানমন্ডি ভুতের গলি, প্লট-৬৩: জুনায়েদ সাহেবের জমি দখলের চেষ্টা।

ওয়াপদা কলোনি, যাত্রাবাড়ী: নাজমুল সাহেবের জমিতে ফ্ল্যাট বিক্রি, কিন্তু হস্তান্তর না করে প্রতারণা।

দলীয় পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মারুফ নিজেকে প্রভাবশালী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় কাজে লাগিয়ে তিনি একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনীর জন্য প্রায় ১৮ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল ক্রয় করে দেন। এসব মোটরসাইকেলে তার সহযোগীরা এলাকায় মহড়া দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। বাহিনীর পরিচালনার দায়িত্বে আছেন দীন মোহাম্মদ সুমন নামে এক ব্যক্তি।

গ্রেফতারের পর মারুফের দীর্ঘদিনের প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এতদিন দলীয় প্রভাব ও সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পাননি।

মারুফ আহমেদ শাহ শুধু রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপেই জড়িত ছিলেন না, বরং ভূমিদস্যুতা, প্রতারণা, জালিয়াতি, আদালতের আদেশ অমান্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজধানীতে এক কুখ্যাত অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। তার গ্রেফতারের পর এখন এলাকাবাসীর প্রত্যাশা—আইনের কঠোর শাস্তির মাধ্যমে এই অপরাধ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *