পিরোজপুর প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১১ বছর পর পিরোজপুর সদর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোট গণনার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় গণনা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে পিরোজপুর শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন।
কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রিয়াজউদ্দিন রানা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আকন, সাইদুল ইসলাম কিসমত, হাসানুল কবির লিনসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, দমন-পীড়ন ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তাদের মতে, ত্যাগী ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে সংগঠন আরও সুসংহত হবে।
গণনায় বিঘ্ন ও উত্তেজনার সৃষ্টি
ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় গণনা শুরুর কিছুক্ষণ পর মিলনায়তনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে গণনায় বিঘ্ন ঘটে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা রক্ষার্থে ভোট গণনা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বক্তব্যকে ঘিরে ক্ষোভ
ঘটনার পেছনে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধও ভূমিকা রেখেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রিয়াজউদ্দিন রানার বক্তব্য ঘিরেই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। সে সময় তিনি বলেন,
“দলে অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত ১৭ বছর যারা দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারাই প্রকৃত নেতৃত্বের দাবিদার। অথচ সুবিধাভোগীরা এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তা দলের জন্য আত্মঘাতী হবে।”
তিনি বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক যুবলীগ নেতার ভাইপোকে বিএনপির কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে। তার মন্তব্য:
“যুবলীগ নেতার ভাইপো বিএনপিতে আসবে কেন? তাকে কেন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হলো? এটা খুবই দুঃখজনক।”
দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিল বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারত। কিন্তু নেতৃত্ব নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ সংগঠনের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নেতারা যেখানে ত্যাগী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি করছেন, সেখানে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। এসব পরিস্থিতি পরবর্তীতে দলের সাংগঠনিক স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিএনপির এই কাউন্সিল পিরোজপুর সদরে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হলেও সংঘটিত বিশৃঙ্খলা দলটির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো প্রকাশ্যে এনেছে। নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে স্বচ্ছতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা না হলে, এমন সংকট ভবিষ্যতেও দলকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাউন্সিল সম্পন্ন করাই এখন সংগঠনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।