যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ে অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্য: অনিমেষ মন্ডল ও মোঃ এনামুল হকের চক্র

স্টাফ রিপোর্টার:

গোপালগঞ্জ জেলার সন্তান, যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক অনিমেষ মন্ডল এবং মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মোঃ এনামুল হক সরকারি নিয়ম-কানুনকে উপেক্ষা করে গাড়ি পরিদর্শন এবং ফিটনেস নবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত।

একটি পত্রিকার অনুসন্ধান টিম গত ২২ জুন সরেজমিনে যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখেছে, ঢাকা মেট্রো ট-২২-১৩৭৭ নম্বর গাড়িটি ফিটনেস সনদ নবায়নের জন্য উপস্থিত হয়। গাড়িটির ফিটনেসের মেয়াদ ছিল ২৩/০৬/২০২৫। গাড়িটির ভাঙা গ্লাস থাকা সত্ত্বেও মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মোঃ এনামুল হক গাড়িটি পরিদর্শন করেন এবং কোনো অভিযোগ ছাড়াই পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রদান করেন।

পরবর্তীতে অনুসন্ধান টিম দেখেছে, অনিমেষ মন্ডল এবং মোঃ এনামুল হক যৌথভাবে অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে গাড়িটির ফিটনেস নবায়ন করেন। বর্তমানে গাড়িটির ফিটনেসের মেয়াদ ২৩/০৬/২০২৬ পর্যন্ত নবায়ন করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য, অনিমেষ মন্ডলের বিরুদ্ধে ২ জুন একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল এবং সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

মোটরযান পরিদর্শক অনিমেষ মন্ডল যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ে এক পরিচিত নাম অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের জন্য। দপ্তরে যোগদানের পর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে গাড়ি পরিদর্শন ও ফিটনেস নবায়নে নিয়মবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনিমেষ মন্ডল প্রতিটি গাড়ি ফিটনেস নবায়নের সময় গাড়ি মালিক বা চালকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন।

মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মোঃ এনামুল হক যশোর কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি গাড়ি পরিদর্শনের জন্য ২০০ বা তার বেশি টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল চক্রের সদস্য জানান, ঘুষের অর্থ বিভাগীয় কর্মকর্তা ও পরিচালক থেকে শুরু করে নিচ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন যাবত যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে আসছে। বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অনিমেষ মন্ডল তার দপ্তরের সহকর্মীদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ করে এবং প্রায়শই গাড়ির ভাঙা অংশ, ফিটনেসের অযোগ্যতা বা অন্যান্য নিরাপত্তা সমস্যাগুলো দেখেও রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করেন না, যাতে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে দপ্তরের নিয়মাবলীর স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

অনিমেষ মন্ডলের এই কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র এক বা দুই গাড়ি সীমিত নয়; এটি দফতরের সেবা প্রক্রিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবিত করছে, যার ফলে সাধারণ গ্রাহকরা বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ে অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের একটি প্রধান নায়ক হিসেবে পরিচিত।

ফলে অনিমেষ মন্ডল শুধু গোপালগঞ্জের সন্তান হিসেবে নয়, বরং যশোরে দপ্তরের দুর্নীতির প্রতীক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন।

পরবর্তী প্রতিবেদনের জন্য অনুসন্ধান চলমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *