নাছিমা খাতুন সুলতানা:
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের সোনাকান্দি গ্রামে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর হুমায়ুন হত্যা মামলার আসামিদের এখনও সম্পূর্ণ গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে নিহতের পরিবার গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং আসামিদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
হত্যার ঘটনা
গত ১৩ জুন ২০২৫ ইং, বিকেল ৬টার দিকে সোনাকান্দি গ্রামের কাইয়ুমের ছেলে মোঃ হুমায়ুন কবির (২২) স্থানীয় পাচার বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন। দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের মোঃ আঃ কুদ্দুছের ছেলে মোঃ বাদল মিয়া ওরফে তোতা মিয়া গংদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হুমায়ুন বাজারে যাওয়ার সময় বাদল গং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি পাশের তারা মিয়ার চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা পাননি। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয়রা দোকানদারের সঙ্গে চিৎকার শুনে এগিয়ে আসলেও ততক্ষণে হুমায়ুন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলা ও গ্রেফতার
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোঃ কাইয়ুম বাদী হয়ে ১৬ জুন ২০২৫ ইং তারিখে গৌরীপুর থানায় বাদল মিয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানার মামলা নং-১৬ হিসেবে রুজু হয়।
পুলিশ এ পর্যন্ত ১ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে, RAB গ্রেফতার করেছে আরও ১ জনকে এবং একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। মোট ৩ জন আসামি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। তবে মামলার আরও ৩ জন আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। বাকি আসামিরা এখনো পলাতক।
হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা
বাদী কাইয়ুম অভিযোগ করেছেন, জামিনে মুক্ত হয়ে আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে এবং তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এতে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “আমি বিচার চাই, আমি প্রশাসনের সাহায্য চাই। আমার পরিবারের লোকজনকে নিরাপত্তা দিন এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করুন।”
এলাকায় উত্তেজনা
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষও আতঙ্কে রয়েছে যে, যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয়দের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেফতার না করে, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকের কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে নিহত হুমায়ুনের বাবা কাইয়ুম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার পরিবার প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন—আমাদের নিরাপত্তা দিন।”
পরিবারের দাবি
বর্তমানে হুমায়ুনের পরিবার নিদারুণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।