ফ্যাসিবাদ ফেরানোর লক্ষেই দেশে অরাজকতা, ধর্মীয় উগ্রতা বাড়ানো হচ্ছে – রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোসহ সাম্প্রতিক বর্বরতা, নৃশংসতা ও অরাজকতার প্রতিবাদে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আজ ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

দলের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছেন। জনগণের মধ্যে বিভেদ ও বিভক্তি তৈরি করে লুটপাট, জুলুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে ট্যাগিংয়ের রাজনীতি চালু করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল আইনের শাসন ও সামাজিক সুবিচারের। কিন্তু সরকারের এক বছর পার হলেও আইনের শাসনের কোনো বালাই নেই। বরং সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

সমাবেশের প্রধান বক্তা ও দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, সৌদিতে নবীর মাজার শরীফ যেমন আছে, তেমনি আবু জাহেলের কবরও আছে। কিন্তু সেখানেও কোনো কাফেরের লাশ কবর থেকে তুলে পোড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। অথচ বাংলাদেশে ধর্মের নামে মাজার ভাঙা ও লাশ পোড়ানোর মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে। সরকারের ব্যর্থতায় এ চরম অধর্ম সংঘটিত হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল এসব কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থানের পক্ষের একটি শক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আগুন নিয়ে খেলবেন না, আগুন সবাইকে পোড়ায়।”

তার মতে, বিচারবহির্ভূত হামলা, লুটপাট, দখল প্রচেষ্টা ও সংঘাত এখন অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এগুলোই অভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে বড় বাধা হয়ে উঠছে। নাগরিকদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদার রাষ্ট্র বিনির্মাণে এসব কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।

ধর্মের নামে, অভ্যুত্থানের নামে বিচারবহির্ভূত হামলা, অগ্নিসংযোগ, দখল ও লুটপাট অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন—এভাবে চলতে থাকলে জরুরি অবস্থা জারিসহ নানা সংকট তৈরি হবে। যার সুযোগ নেবে অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তি, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকার এবং সামগ্রিক ফ্যাসিবাদ। এর ফলে বাংলাদেশকে আবারও বিশ্বে উগ্রবাদী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হতে পারে। আর এ পরিণতি জনগণকেই বহন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে দলের জাতীয় সমন্বয়ক লিটন কবিরাজ দেশের সব নাগরিককে আহ্বান জানান, যে যার অবস্থান থেকে এসব ষড়যন্ত্র ও দুষ্কর্মের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি মিন্টু মিয়া, যুব আন্দোলনের সংগঠক রেজোয়ানুর রহমান, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লামিয়া ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক সামছুদ্দিন রাকিব, অহিংস গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট হানিফ বাংলাদেশী।

সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের জাতীয় সমন্বয়ক ছামিউল আলম রাসু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *