ফতুল্লায় কিশোর গ্যাং লিডার ইভনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী:

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হল কিশোর গ্যাং লিডার ইভন (৩০)। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত ৯টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানাধীন অক্টো অফিস চেঙ্গিস খানের বাড়ির সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রতিপক্ষ সাইফুল গ্রুপের সদস্যরা তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

নিহত ও ঘটনার পটভূমি

নিহত ইভনের পূর্ণ নাম এম. এ. আযম বাবুর ছেলে ইভন, যিনি ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ইভন গ্রুপ ও সাইফুল গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় রক্তাক্ত এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে সাইফুল, বাবু ও তাদের অপর এক ভাইসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে ইভনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। গুরুতর আহত ইভনকে তার সহযোগীরা দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরিবারের বক্তব্য

নিহতের বড় ভাই রাফিন সাংবাদিকদের জানান, “ভাইয়ের খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসি। এসে জানতে পারি, আমার ভাই আর নেই।” তিনি হত্যার ঘটনায় সাইফুল গ্রুপকে দায়ী করে দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।

পুলিশের বক্তব্য

ঘটনার পরপরই ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, “ইভনের বাবার দেওয়া বয়ান অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি—সাইফুল, বাবু ও তাদের সহযোগীরা মিলে রাত ৯টার দিকে ইভনের ওপর হামলা চালায়। আমরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি এবং আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।”

এলাকায় আতঙ্ক

খুনের ঘটনায় ইসদাইর ও আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও খুনোখুনিতে এলাকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

লাশ ময়নাতদন্তে

ইভনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

তদন্তের দাবি

স্থানীয় সচেতন মহল ও নিহতের পরিবার বলছে, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির কারণে ফতুল্লা এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা থামবে না। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *