টনসিল অপারেশনের পর জ্ঞান না ফেরায় গৃহবধূর মৃত্যু: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, প্রশ্নের মুখে সরকারি ডাক্তারের ভূমিকা

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:

মানিকগঞ্জের ইউনাইটেড হাসপাতালে টনসিল অপারেশনের পর জ্ঞান না ফেরায় এবং নাক দিয়ে রক্ত আসার পর জিয়াসমিন আক্তার শিল্পী (৩৭) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনায় চিকিৎসায় চরম গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অপারেশনকারী চিকিৎসক ডাঃ এনামুল হক ও অ্যানেস্থেসিয়া দায়িত্বরত সরকারি ডাক্তার জিয়াউল হক এর বিরুদ্ধে।

নিহত জিয়াসমিন আক্তার শিল্পী (৩৭) জেলার দৌলতপুর উপজেলার উলাইল গ্রামের বাসিন্দা এবং রেজাউল করিমের স্ত্রী। তিনি শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টায় মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।
বিকাল ৪টা বা ৪:১৫ মিনিটে তাঁর টনসিল অপারেশন করা হয়।

অপারেশনের সার্জন ছিলেন: ডা. এনামুল হক

অ্যানেস্থেসিয়ার দায়িত্বে ছিলেন: ডা. জিয়াউল হক (সরকারি চাকরিজীবী, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল)

অপারেশনের পরপরই রোগীর জ্ঞান ফেরেনি, এবং নাক দিয়ে রক্ত আসতে থাকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রোগীকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসকরা জিয়াসমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়দের দাবি,
রোগীর পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে অপারেশন করা হয়।

  • রোগীর পূর্ণ ফিটনেস রিপোর্ট ছিল না

  • অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার আগে পূর্ণ অনুমোদন/অনুমতি যাচাই হয়নি

  • দায়িত্বরত অ্যানেস্থেটিস্ট ছিলেন সরকারি কর্মরত ডাক্তার, যিনি NOC (No Objection Certificate) ছাড়াই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ডা. এনামুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একবার ফোন রিসিভ করে শুধু “হ্যাঁ” বলেই কেটে দেন।

অ্যানেস্থেসিয়ার দায়িত্বে থাকা ডা. জিয়াউল হক বলেন—

“রোগীকে টেস্ট করা হয়েছে খাওয়ার কথা রোগী জিজ্ঞেস করেছি রোগী বলছেন সকালে খেয়েছি। কিন্তু ডাক্তার রোগীর পরীক্ষা কোন কাগজ দেখাতে পারেনি।”

তবে অপারেশন ঠিক কোন ভিত্তিতে করা হয়— সে বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন,

“এটি ভুল চিকিৎসার ঘটনা নয়। অপারেশনের পর রোগীর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আমরা রোগী পক্ষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।”

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোকছেদুল মোমিন বলেন, আমাকে ওরকম ভাবে কেউ জানায়নি তবে অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার জিয়াউল হক বললো রোগীকে ৪ টায় অপারেশন করা হয়, রোগীর পূর্বের টেস্ট করা ছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো (NOC) সার্টিফিকেট, অনুমতি ও কিছু নাই। আমার কাছে কেউ অভিযোগ দায়ের করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস. এম. আমান উল্লাহ বলেন,

“পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।”

প্রশ্নের মুখে সরকারি ডাক্তারের ভূমিকা:
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরিরত কোনো ডাক্তার অফিস টাইমের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি (NOC) নিতে হয়।
এই অনুমতি ছাড়াই যদি তিনি বেসরকারি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করেন, সেটি সরকারি চাকরি বিধিমালার লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া, অ্যানেস্থেসিয়ার ক্ষেত্রে:

  • রোগীর ফিটনেস সার্টিফিকেট

  • পূর্ণ মেডিকেল হিস্ট্রি

  • সার্বিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এই ঘটনায় চিকিৎসা ব্যবস্থার মান, জবাবদিহিতা এবং রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।

দুই সন্তান রেখে না ফেরার দেশে

নিহত জিয়াসমিন রেখে গেছেন ৮ বছর বয়সী এক ছেলে এবং মাত্র ৭ মাস বয়সী এক কন্যাসন্তান।
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *