স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরবেন বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে খবর আসছে। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির রাজনীতিতে নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বিশেষ আলোচনা হয়, যেখানে অতিথি ছিলেন জাতীয় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তারেকের নেতৃত্বের পরিপক্কতা ও পরিবর্তন:
টকশোতে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “তারেক রহমানের বক্তব্য এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিপক্ক হয়েছে। অনেক বছর তিনি দেশে ছিলেন না। আগে যখন ছিলেন, তখন জেল ছিল, আবার কখনও রাজনীতিতে হাতে খড়ি নিচ্ছিলেন। সেই সময় তাকে আমরা পরিপূর্ণভাবে দেখিনি। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তের সময় আমরা তাকে আংশিকভাবে দেখেছি, যা পরিপূর্ণ চিত্র তৈরি করেনি। কিন্তু বর্তমানে মনে হচ্ছে যে সব শেষের দিকে। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে তারেকের বক্তব্যগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক এবং রিলেটিভলি ম্যাচিউরড।”
মান্না আরও বলেন, “দুই-তিনবার আমরা তার সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেছি। আমাদের জোটের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যারা একসাথে এই কয়েক বছর আন্দোলন করেছি, আমরা সবাই কথা বলেছি। এখানে তারেককে অনেক পেশেন্ট মনে হয়েছে। তিনি সবার কথা শুনতে চেয়েছেন, কাউকে চাপিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বলেননি। বরং যেসব জায়গায় আমরা চাইছি তিনি সিদ্ধান্ত নিন, আমরা অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি চাইলে না, তখন বলেন—আপনারা ভাবুন, আমিও ভাবি। এই পদ্ধতি তার নেতৃত্বের একটি বড় পরিপক্কতার পরিচয় দেয়।”
দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ:
যদিও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তবে দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনও সময় লাগবে বলে মনে করছেন মান্না। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা তিনি বুঝেছেন। কিন্তু সেটাকে কতখানি বাস্তবায়ন করতে পারছেন, সেটি এখনো একটি বড় প্রশ্ন। কারণ দলের অনেক নেতাকর্মী এখনও সমস্যায় আছে। উদাহরণস্বরূপ, ৩-৪ হাজার নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছে। চাঁদাবাজি কি কমেছে, দখলদারিত্ব কি কমেছে—এগুলো এখনো চ্যালেঞ্জ।”
মান্না আরও উল্লেখ করেন, “জাতীয় রাজনীতিতে এখন দখল ও ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতা তীব্র। সাদা পাথর, বালু বা অন্যান্য সম্পদ দখলের জন্য বিভিন্ন দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য পার্টি এক হয়ে যেতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তারেকের কথায়, এটা এখনই করতে পারব না, তবে ক্ষমতায় এলে তিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন।”
দেশ ও বিএনপিতে প্রভাব:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেকের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে। দলের ভেতরে যে বিভাজন ও অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা ধীরে ধীরে কমবে। দলের কেন্দ্র ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, দেশের রাজনীতিতে তার প্রভাব হবে তীব্র; বিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপি নতুনভাবে শক্তিশালী হতে পারে। ভোটারদের মধ্যে তার নেতৃত্বে আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং রাজনৈতিক উত্তাপও কিছুটা বাড়তে পারে।
মাহমুদুর রহমান মান্না এই দিকেও ইঙ্গিত দেন যে, “যতই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হোক, তারেকের পরিপক্কতা ও ধৈর্য তা সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে বাস্তবায়ন এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এখনও আছে।”